আজ পবিত্র মিলাদুন্নবী বিশ্ব মানবতার দূত মুহাম্মদ (সা:) আগমন ও পরগোমন!
হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দের এদিনে মক্কার কুরাইশ বংশে বাবা আব্দুল্লাহ ও মা আমেনার ঘরে জন্মলাভ করেন তিনি। ইসলামের সুমহান দ্বীন প্রচার শেষে ৬৩ বছর বয়সে ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে ১১ হিজরির ঠিক এ দিনেই তিনি আল্লাহ প্রদত্ত রিসালাতের সব দায়িত্ব পালন শেষে আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে মাওলার সান্নিধ্যে গমন করেন।
এজন্য দিনটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সর্বশেষ ও সর্বশেষ্ঠ নবীর জন্ম ও মৃত্যু একইদিনে হলেও মুসলিমরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) বা জন্মউৎসবের দিন হিসেবে পালন করে থাকে। এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আজকের দিনটি শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, গোটা বিশ্ববাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মহানবী (সা.) শুধু আরববাসীর জন্য নয়, গোটা বিশ্ববাসীর মঙ্গল ও শান্তির জন্য এসেছিলেন। শান্তি ও সাম্যের বাণী নিয়ে মানবেতিহাসের চরম দুর্যোগময় মুহূর্তে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার আগমনে দূরীভূত হয় পাপ পংকিলতা, অন্যায়, অবিচার আর কুসংস্কার। বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানী। সেই আলোর অবগাহন করে বিশ্ববাসী। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে ঠাঁই নেয় অত্যাচারিত, নির্যাতিত ও পথভ্রষ্ট মানুষ। প্রতিষ্ঠিত হয় সত্য, ন্যায় ও সুন্দর। পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবাণীতে মানবজাতি পায় শ্রেষ্ঠ জীবের মর্যাদা। পবিত্র আল কুরআনের ভাষায়- রসুল (সা.) হলেন রাহমাতুল্লিল আল আমিন বা সমস্ত জগতের রহমতস্বরূপ। মহানবী (সা.) এর সীরাত-এর বা জীবনাদর্শের অনুসরণ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে মানবজাতির সামনে কোনো বিকল্প নেই। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মহানবী (সা.) এর জীবন জুড়ে রয়েছে মানুষের জন্য এক অনুপম শিক্ষা। সত্য, সুন্দর ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে সারা জীবনই তাকে বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে বাতিলের নির্যাতন ও নিপীড়ন। অসীম ত্যাগ স্বীকার করে ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে তিনি মোকাবেলা করেছেন তাগুতি শক্তিকে। আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগে তিনি জন্মগ্রহণ করেও দূরে ছিলেন জাহেলিয়াত থেকে। বরং তার আর্বিভাবের জন্যই মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্বের অবসান হয়, গোলাম পায় মানুষের মর্যাদা, দাসত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় নারীরা, বিলুপ্ত হয় বর্ণবাদ, কবর রচিত হয় জাহেলিয়াতের। আর তাইতো মনিষী জর্জ বার্নার্ড শ বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর মতো একজন মানুষ যদি বর্তমান যুগের রাষ্ট্রপ্রধান হতেন, তাহলে সমাজে শান্তি, মুক্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসতো।
ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য : ঈদ, মিলাদ আর নবী তিনটি শব্দ যোগে দিবসটির নামকরণ হয়েছে। ঈদ অর্থ- আনন্দোৎসব, মিলাদ অর্থ- জন্মদিন আর নবী অর্থ ঐশী বার্তাবাহক। তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবীর অর্থ দাঁড়ায় নবীর জন্মদিনের আনন্দোৎসব। ১২ রবিউল আউয়াল একই সাথে মহানবীর জন্ম ও মৃত্যু দিবস হলেও তা শুধু জন্মোৎসব হিসেবেই পালিত হয়।
পৃথিবীর যেকোনো মানুষের মুত্যুই তাঁর পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করে। কিন্তু মহানবীর মৃত্যু মানবসমাজ ও সভ্যতার কোনো পর্যায়ে কোনো শূন্যতার সৃষ্টি করেনি। যদিও তাঁর মৃত্যুর চেয়ে অধিক বেদনাদায়ক কোনো বিষয় উম্মতের জন্য হতে পারে না। তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন সমগ্র পৃথিবীর জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে।
চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়াতি লাভের পর দীর্ঘ ২৩ বছর হজরত মুহাম্মদ (সা:) কঠোর পরিশ্রম ও শত বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করে ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচার করে গেছেন। তার প্রতিটি কাজ, কথা আমাদের জন্য আদর্শ। তার দেখানো পথেই পৃথিবীতে আসতে পারে শান্তি ও মানবতার মুক্তি। এরশাদ হয়েছে, আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৭)।
আসলেই তাই, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনাদর্শ যদি অনুসরণ করা যায় তবে অশান্তি, অস্থিরতা, অন্যায়, অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আজকের এই সুন্দর পবিত্র দিনে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে মহানবী (সা.) এর আদর্শ এবং শিক্ষা আমরা কতোটুকু গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সমাজে যে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে, তা প্রমাণ করে আমরা মহান আল্লাহর নির্দেশনা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। সত্যি বলতে কি, মুসলিম বিশ্বের সংহতি, ঐক্য আজ হুমকির সম্মুখীন। শক্তিশালী নয় ঈমানী চেতনাও। ইসলামের নামে ইসলাম বিদ্বেষীদের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড ঘটে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে আজকের দিনটি হোক বিশ্ব মুসলিমের জন্য নবউদ্দীপনার নবজাগরণের। আজ বিশ্ববাসীকে শপথ নিতে হবে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বিধান অনুসারে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার, একটি সুন্দর ও শান্তিময় সমাজ, একটি সুন্দর বাসযোগ্য বিশ্ব গড়ে তোলার। আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে উম্মতে মুহাম্মদীকে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেই শক্তি দান করুন ।