ঈদকে সামনে রেখে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে বাসের টিকিট
সড়কপথে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের দূরত্ব (ঢাকা-রংপুর-ঠাকুরগাঁও) ৩৯৫ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সা। এ হিসাবে ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে আসনভাড়া হওয়ার কথা ৫৬০ টাকা। তবে ঈদ ঘিরে আদায় করা হচ্ছে আসনপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
গতকাল সরেজমিন রাজধানীর গাবতলীতে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। ঈদের আগে-পরের কয়েক দিন অনলাইনেও ঠাকুরগাঁওগামী কোনো বাসের টিকিট ৮০০ টাকার কমে মিলছে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে ভাড়া বৃদ্ধির হার আরো বেশি। স্বাভাবিক সময়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যেসব বাসের একটি আসনের টিকিট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তা বিক্রি হচ্ছে দুই-আড়াই হাজার টাকায়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলগামী সব বাসের টিকিটই বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ দামে।
কুষ্টিয়া, বাগেরহাটসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী সব বাসেই ঈদে আসনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া বেশির ভাগ রুটের বাসেই আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট। এ রুটে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি আসনের টিকিট বিক্রি করা হয় ৪৮০ টাকায়। বর্তমানেও একই দামে তা পাওয়া যাচ্ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদে বাড়তি যাত্রী চাপের সুবিধা কাজে লাগিয়ে পরিবহন মালিকরা ইচ্ছামতো ও অস্বাভাবিক হারে ভাড়া আদায় করছেন। তবে পরিবহন মালিকরা বলছেন, ঈদে যাত্রীর চাপ থাকে একমুখী। ভর্তি বাস নিয়ে গন্তব্যে গেলেও ফিরতে হয় যাত্রী ছাড়াই। এর বাইরে যানজটের কারণেও একটি ট্রিপ দিতে অনেক সময় লেগে যায়। এ কারণে ভাড়া ‘কিছুটা’ বাড়ানো হয়েছে।
রাজধানীর গাবতলী কাউন্টার থেকে ১৪ জুনের ঠাকুরগাঁওগামী নন-এসি বাসের একটি টিকিট ১ হাজার টাকায় কিনেছেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের একটি টিকিট ৬০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। ঈদে এক লাফে ভাড়া দ্বিগুণ
হয়ে গেছে। ঈদে তো বাড়ি যেতেই হবে। আমাদের এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে পরিবহন মালিকরা অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বাড়িয়েছেন।
ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ঈদের সময় দূরপাল্লার রুটগুলোয় একমুখী যাত্রী পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের একটি বাস হয়তো সব আসনে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে গেল। ফেরার পথে বেশির ভাগ বাসের সিংহভাগ আসন ফাঁকা থাকে। অথচ যাওয়ার সময় যা পরিচালন ব্যয় হয়, আসার ক্ষেত্রেও ঠিক তা একই রকম। আবার দেখা যায়, যানজটের কারণে ৭-৮ ঘণ্টার একটি ট্রিপ শেষ করতে ১৫-১৬ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। এ কারণেও পরিচালন ব্যয় বেড়ে যায়। এসব কারণে ঈদযাত্রায় যাত্রীপ্রতি ভাড়া ‘কিছুটা’ বাড়ানো অস্বাভাবিক নয়।
এবার ঈদ উপলক্ষে গত ৩০ মে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন পরিবহন মালিকরা। চাহিদা বেশি থাকায় প্রথম দিনেই বিক্রি হয়ে গেছে ১৩ ও ১৪ জুনের বেশির ভাগ টিকিট। গতকালও গাবতলী কাউন্টারে ১৩ অথবা ১৪ জুনের টিকিটের জন্য একাধিক যাত্রীকে দেখা গেছে, যাদের কেউই কাঙ্ক্ষিত টিকিটটি পাননি।
যাত্রী অধিকারকর্মীরা ঈদে বাসভাড়া বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করছেন। এ সম্পর্কে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রতি ঈদেই বাস মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। এবারো আদায় করা হচ্ছে। আমাদের কাছে কয়েক দিন ধরে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ আসছে। বেশির ভাগই অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঈদে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না।
তিনি আরো বলেন, বিআরটিএ বরাবরই ভ্রাম্যমাণ আদালত সংকটের কথা বলে। আমি যত দূর জানি, ঢাকায় তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা নয়টির মতো। অন্যদিকে বাস কাউন্টারগুলো তো নির্দিষ্ট কয়েকটা জায়গাতেই রয়েছে। অর্থাৎ সহজেই তাদের পক্ষে সিংহভাগ কাউন্টারে অভিযান চালানো সম্ভব। বিআরটিএর নীরব ভূমিকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে এক প্রকার প্রশ্রয়ই দিচ্ছে।