খুলনার কপিলমুনিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে রশি টানাটানি
বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলদেশের সবচেয়ে রাজাকার দ্বারা অত্যাচারিত স্হান খুলনার কপিলমুনি। রায় সাহেবের সুরম্য দ্বিতল অট্টালিকা “বিনোদ ভবন” ছিল রাজাকারদের দুর্ভেদ্য আস্তানা। সেখানে বসে রাজাকাররা খুলনা-সাতক্ষীরার বৃহৎ একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করত। প্রায় পাঁচ হাজার নিরীর মানুষকে চরম নিগৃহের সাথে মর্মান্তিক ভাবে অত্যাচার-নির্যাতন অতঃপর সদ্য নির্মিত কপিলমুনি ফুলতলা বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতো।
১৯৭১ সালে রাজাকাররা শান্তি কমিটির নামে শুরু করে অশান্তি। কপিলমুনি রাজাকারদের চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হন বিশিষ্ঠ সমাজসেবক ও তদানিন্তন পাইকগাছার উপজেলার ৭ নং গদাইপুর ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান শেখ মাহতাব উদ্দিন মনি মিয়া। তাকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে আসে। পথিমধ্যে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অব্যাহত চাপের মুখে তাঁকে কপিলমুনি রাজারকার ক্যাম্প পর্যন্ত আনা হয়নি। আগড়ঘাটা শিলেমানপুর নদীর চরে ১১ টি বুলেটের আঘাতে বুক ঝাঁঝরা করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। মনি মিয়ার বড় সন্তান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাহাদাত হোসেন বাচ্চু, কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী। তার আরেক সন্তান পাইকগাছা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, শেখ কামরুল হাসান টিপু, তার এক ভাই ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও থানা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় সভাপতি প্রয়াত শেখ বেলাল উদ্দিন বিলু। মনি মিয়ার আরেক সন্তান আওয়ামী লীগের জেলার প্রভাবশালী নেতা পৌর কাউন্সিলর শেখ আনিসুর রহমান মুক্ত, এবং তার এক কন্যা পঞ্চগড় জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক বর্তমানে উপ সচিব সাবিনা ইয়াসমিন মালা সহ অন্যান্য সন্তানরা সুনাম ধণ্য শিক্ষক হিসাবে সুখ্যাতি সহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত আছেন।
খুলনার কপিলমুনি প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে পাইকগাছা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য শেখ কামরুল হাসান টিপু তার বাবার হত্যার ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন। শহীদ পরিবারের পক্ষে তিনি তার বাবার স্মৃতি রক্ষার্থে কিছু করার জন্য জোর দাবি উত্থাপন করেছিলেন।
প্রতিটি হত্যার ঘটনা হৃদয়বিদারক ছিল, স্বজন হারা শহীদ পরিবার গুলোর কাছে। তাইতো রায় সাহেবের “বিনোদ ভবন” তাদের কাছে কলঙ্কিত এক ঐতিহাসিক স্মৃতি। যার বাতাসে আজও ভেসে বেড়ায় লাশের গন্ধ।
এই শহীদ পরিবারটি সেদিনের বর্বরোচিত ঘটনার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আজও চোখের পানি ফেলেন। ধিক্কার জানান রাজাকারদের। তারাও চান যারা তার বাবাকে হত্যা করেছিল এবং অসংখ্য নিরীহ মানুষের হত্যার পরিকল্পনার
নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা সবাই রায় সাহেবের বাড়ি বিনোদ ভবনে থাকতো। এখানে বসেই হত্যাযজ্ঞ চালাতো। তাই এই বাড়িটি তাদেরমত শহীদ পরিবারের জন্য একটা ঐতিহাসিক স্মৃতি।
অন্যদিকে কপিলমুনি যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা পাইকগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সেখ দিদার হোসেন, হরিঢালী ইউনিয়ন কমান্ডার সেখ আব্দুল ওদুদ, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সালাম উল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সেখ লুৎফর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আঃ লতিফ সরদার সহ এলাকার অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি যেহেতু রায় সাহেবের বিনোদ ভবন ঘিরে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠিত হয়। সেহেতু মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সটি সরকারি ভিপি সম্পত্তির উপর নির্মিত হোক।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে বাধা প্রদানকারী সহ দখলদারদের পক্ষে মহল বিশেষের রহস্যজনক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে ফুঁসে উঠেছে কপিলমুনিবাসী। ধিক্কার জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা সহ সচেতন মহল। ঘটনার পর থেকে রাজাকারদের লোমহর্ষক হৃদয়বিদারক অত্যাচার-নির্যাতনের নানাবিধ কাহিনী স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ঘুরেফিরে মানুষের মুখে মুখে। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে কৌতুহলী মানুষের প্রশ্ন? তাদের মতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং হাজার হাজার শহীদ পরিবারের স্মৃতি ঘেরা রায় সাহেবের “বিনোদ ভবনটি” স্বাধীনতার স্বপক্ষের এই সরকারের দায়িত্বশীল প্রশাসন আদৌ কি দখলবাজদের কবল থেকে রায় সাহেবের বেদখকৃত সম্পত্তি অবমুক্ত করতে পারেবেন? (#চলবে)