কিছু শখ আপনার জীবনের উন্নতি এনে দিতে পারে!
শখের কাজগুলো আমরা সাধারণত অবসর সময়েই করে থাকি। আমাদের শখ, এমন কিছু নির্দিষ্ট কাজ যা আমাদের আনন্দ দেয়, যেটা আমরা ভালবাসি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় আমাদের কাছে শখের কাজগুলো করার সময় তো দূরে থাক, বরং প্রয়োজনীয় কাজের সময় পর্যন্ত নেই যেন। ফলে জীবন এবং ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠছে বিরক্তিকর। আজ এমন কিছু শখের কাজ নিয়ে লেখা হবে, যেগুলোর এক বা একাধিক পছন্দমতো বেছে নিয়ে আপনি ব্যক্তি জীবনের উন্নতি করতে পারেন। এই শখগুলো একাধারে আনন্দের এবং সুলভ। সুতরাং প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে বিশ্রামের নির্দিষ্ট সময় বের করে নিয়ে, সেই সময়ে শখের কাজটি করতে পারেন। এতে করে দৈনন্দিন কাজেও উদ্যম ফিরে আসবে।
রোজকার ব্যায়াম : ব্যায়াম করার জন্য জিমে ভর্তি হতে হবে, নির্দিষ্ট পোশাক থাকা লাগবে- এসব ধারণা অনেকটাই ভুল। বাড়ির সিঁড়িতে কয়েকবার ওঠানামা, কয়েকবার বুকডান দেওয়া ইত্যাদিও আপনার পেশীকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ব্যায়াম করা অনেকে প্রয়োজনের কারণে অভ্যাসে পরিণত করে, কিন্তু আপনি যদি এটাকে শখ হিসেবে দেখতে শুরু করেন, তাহলে সময় বের করতে কষ্ট হবে না। কঠিন ব্যায়ামের পরিবর্তে করতে পারেন যোগব্যায়ামও। বিভিন্ন আসন ও ধ্যান আপনার শরীরকে সুস্থ, মনকে সুস্থির রাখবে।
গাছ লাগান : সেই যে একদিন ছোট একটা চারাগাছ বা চোখে মেলানো ভার এমন একটা বীজ অনেক খুঁজে বের করা একটা পাত্রে অল্প একটু মাটিতে লাগিয়েছিলেন, দুদিন না যেতেই সেখানে নতুন পাতা এলো, সবুজ দুটো পাতা যেন প্রাণের উচ্ছ্বাসে আপনার সাফল্যের কথা জানাচ্ছে। তারপর সেই গাছে ফুল আসে, ফল হয়। অথবা হয় না, গাছের রোগ হয়। গাছকে সারাতে আপনারও ঘুম হারাম হয়ে যায়। এ আনন্দের তুলনা কোথায়? গ্রামে থাকলে উঠানে পুরো একটা বাগান করে ফেলা সম্ভব। শহরের বাসাতেও কিন্তু বারান্দা বা শোবার ঘরে আপনি ছোট ছোট খুশির জন্ম দিতে পারেন। আপনার এই শখটি আপনাকে ও প্রকৃতিকে উপকৃত করবে।
রান্না করুন : রান্না করতে না জানলে আজই টুকটাক কিছু রান্না করা শুরু করুন। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব লোক নিজেরা রান্না করে খায়, তারা কিনে খাওয়া লোকেদের তুলনায় নীরোগ স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। নিজে যত বেশি রান্না করবেন, তত কম প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ভেজাল আর ময়লা জিনিস আপনার পেটে যাবে। তাছাড়া রান্না করতে জানা একটা গুণ বটে, আর নিজে রাঁধলে যে খরচ বাঁচে একথা কে না জানে?
বই পড়া : শেষ কবে ক্লাসের বইয়ের বাইরে বই পড়েছিলেন? এমন অনেক বইপোকা আছেন, যারা ইন্টারনেট চালু করে বিনা কাজে সারাদিন নিজেদের পছন্দের কাজ বই পড়াকে ভুলে থাকেন। বই আপনাকে নিজে কাছে টেনে নেবে, এমন ভাবাটাও ভুল। বই পড়ার অভ্যাসটাও অভিমানে দূরে চলে যাবে। সুতরাং টেবিলের পাশে রাখুন পছন্দের বইটি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অথবা ঘুমাতে যাওয়ার আগে বই পড়ুন। আলোকিত হবেন নিঃসন্দেহে, তাছাড়া আপনার জীবনের মূল্যবান সময় অধিকতর মূল্যবান কিছুতে কাজে লাগছে, আপনি সময় কম নষ্ট করছেন ভেবে আপনার মানসিক চাপ কমবে। গবেষণায় বলা হয়, বই আপনার মানসিক চাপকে ৬৯ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে।
দাবার ছকে ঘুরে বেড়ান : শখ করে একবার হয়তো দাবার বোর্ড কেনা হয়েছিল, পরে না খেলে উঠিয়ে রেখেছেন আলমারিতে। এবার বোর্ডের ধুলো ঝেড়ে ঘুঁটি সাজিয়ে বসুন। দাবা আমাদের মস্তিষ্কের যুক্তি তৈরির ক্ষমতাকে শাণিত করে। আপনার স্মৃতিশক্তি আর পরিকল্পনা করার শক্তিও বৃদ্ধি করবে দাবার সাদাকালো বোর্ড।
আত্মরক্ষার শিক্ষা : মার্শাল আর্ট, জুডো, কুংফু, তায়কোয়ান্ডো- যে কোন একটাতে পছন্দ ও সাধ্যমতো ভর্তি হয়ে যান। শারীরিক শক্তি এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটা আপনার বাস্তব জীবনের পাথেয় হয়ে দাঁড়াবে।
সাঁতার শিখুন : সেই যে কবিতাটা, সাঁতার না জানায় বাবুর জীবনের ষোলো আনাই মিছে হয়ে গেল, এমন করে জীবন মিছে না করতে চাইলে সাঁতার শেখাটা জরুরী। আর যদি সাঁতার জেনে থাকেন, সপ্তাহে অন্তত দুদিন নেমে পড়তে পারেন পানিতে। সাঁতার একটি ভাল ব্যায়ামও!