খুলনা প্রতিনিধি: মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পায় দেশের ভূমিহীন পরিবার। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনার তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদহের ৩নং ইউনিয়নের কুশলা গ্রামের প্রথম ধাপে ৫৭ লাখ ৫৮ হাজার ৪শ’ ৭২ টাকা ব্যায়ে নির্মিত ৪০টি ঘর পায় ৪০ ভূমিহীন পরিবার। ঘর পেয়ে সবাই আনন্দে আপ্লুত। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা যায় ৪০টি ঘরের মধ্যে কিছু ঘরের অবস্থা খুবই নাজুক। এ ব্যাপারে বসবাসকারিরা প্রশাসনের হস্তপে কামনায় সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিজেই ঠিকাদার বনে এ ঘরগুলো নির্মাণ করেন।
এলাকাবাসীর মনে করে ঘর নির্মাণে টিন, কাঠসহ অন্যান্য সামগ্রীর গুনগত মান ঠিক নয়। তার কারণেই নির্মাণের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোর করুণ অবস্থা। জানা যায়, ঘর নির্মাণের সময় নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ঘরের মেঝেতে নামমাত্র সিমেন্ট দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগই ধূলাবালি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে কয়েক দিন যেতে না যেতেই ঘরগুলো থেকে সিমেন্ট বালুর আস্তারণ খসে পড়ে যাচ্ছে । স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিম্নমানের কাজ করিয়েছে বলে অভিযোগ ¯স্থানীয়দের। ঘরের বেহালদশা নজরে আসলে কর্ত”প মিস্ত্রি দিয়ে ঘরগুলোর রাতারাতি মেরামত করান।
এছাড়া ঘরের এই সমস্যাগুলো কাউকে না জানানোর জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাকারীদের বলেন। দীর্ঘ দিন অনেকেই চুপ ছিল। তবে ঘরগুলোর অবস্থা আবারও নাজুক হওয়ায় এখন বাধ্য হয়ে মুখ খুলছেন কেউ কেউ। যে কারণে বিষয়টি ¯স্থানীয়নীয় গণমাধ্যমের নজরে আসে। এক সময় যারা ভূমিহীন ছিল, এখন তারা ঘর পেলেও বসবাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ফলে যথাযথ কর্ত”পরে দ”ষ্টি আকর্ষণ করেছেন বাসিন্দারা। সরেজমিনে দেখা যায়, নানা সমস্যায় জর্জোরিত ৪০টি ঘরের মধ্যে অনেকগুলো ঘর। কোন ঘরের জানালার কাম খুলে গেছে, মেঝের পলেস্তারা উঠে গেছে, মেঝেতে লম্বা ফাটল। এছাড়া প্রায় প্রতিটি ঘরের ভিতরে ব”ষ্টির পানি পড়ে ও বাথরুমের পানি ও ময়লা নিস্কাসন হয় না। ঘর তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। কাঠ ও টিনের গুনগত মানও ঠিক নাই। ঘর তৈরিতে অনিয়মের বিষয়গুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে উঠে আসলে তড়িৎ গতিতে মিস্ত্রি দিয়ে দায়সারাভাবে সংস্কার করা হয় তিগ্রস্ত ঘরগুলোর। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিজেই ভূমিহীনদের জন্য এইসব ঘর যেনতেনভাবে তৈরি করে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নবনির্মিত এই ঘরগুলোর বেশিরভাগই বেহালদশায় রূপ নিয়েছে।
২০ নং ঘরের বাসিন্দা জানান, ঘরের সিলিং-এ ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের কাঠ। টিন দিয়ে রান্না ঘর ও বাথরুমে পানি পড়ে। আগে ঘরের ভিতর পানি পড়ত স্ক্রুপের গোড়া দিয়ে। কিš’ এখন আর পড়ে না। ঘরের মেঝের পলেস্তারা উঠে গেছিল। তবে ঠিক করে দিয়ে গেছে। ১৭নং ঘরেরও একই অবস্থা বলে জানান বাসিন্দা নাজমা বেগম। বাথরুমের দরজা বন্ধ হয় না। ব”ষ্টি হলেই ঘরের ভিতর পানির সিচ আসে সিলিং এর ফাক দিয়ে।
নাসরিন বেগম থাকেন ৩নং ঘরে মা ও মেয়েকে নিয়ে। নাসরিন বেগমের মা জানান, ঘরের মেঝে উচু-নিচু। বাথরুমের প্যান ঘর পাওয়া থেকেই ভাঙ্গা। আমরা আজ পর্যন্ত বাথরুম ব্যবহার করতে পারি না। অন্যের ঘরে যেয়ে বাথরুম করতে হয়। এখনো পর্যন্ত এইডা ঠিক করে দিল না।
নামপ্রকাশে অনি”ছুক এক মহিলা জানান, আমি এ ঘরে উঠার সাথে সাথে দেখি ঘরের জানালা ভাঙ্গা, ঘরের ফ্লোর থেকে চল্টা উঠে যাচ্ছে , উনারা বলেন এই যে চাবি দিলাম, আজকের থেকে এ ঘরের দায়িত্ব তোমাদের, আমরা কিছু করতে পারব না। ডিসি স্যার ও ইউএনও স্যার আইছিলো। তারা এসে ত্রাণ দিয়ে চলে গেছে। তাদেরকে ঘরের এসব সমস্যার কথা বলতে পারিনি। এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কথা বলতে হলে আমার অফিসে আসতে হবে।
ছাগলাদগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম দীন ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, ঘরগুলোর অবস্থা দেখে আমি সংশ্লিষ্টদের জানাব। তবে ডিসি মহোদয়ের সাথে যখন গিয়েছিলাম তখন তো ঘরগুলো ভালই দেখেছিলাম। তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা এ ব্যাপারে অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কোন তথ্য সঠিক না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিজিট করে গেছে। তারা কোন প্রকার অনিয়ম ও ত্রুটি পায়নি। ঘরগুলোর বেহাল দশা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।
খুলনার জেলা প্রশাসক মনিরুল হক তালুকদার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পর ব্যাপারে তেরখাদা ইউএনও এর সাথে যোগাযোগ করলে ভাল হয়। কারণ তিনি এটা তদারকি করছেন। (খুলনা টিভি )