প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের কর্ণধারকে দুদকে তলব!
এ বিষয়ে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জন সহ সরকারি জমি দখল, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল বকেয়া ও দেশের বাইরে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে লতিফুর রহমানকে।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের স্বাক্ষর করা এক নোটিশে দুদকের প্রদান কার্যালয়ে আগামী ১৮ অক্টোবর সকাল ১০ টায় হাজির হতে বলা হয়েছে লতিফুর রহমানকে।
দুদকের নোটিশে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘জনাব লতিফুর রহমান, চেয়ারম্যান ও সিইও ট্রান্সকম গ্রুপ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ট্রান্সকম গ্রুপভুক্ত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের গ্যাস বিল, বিদ্যুত বিল ও ভ্যাট ইত্যাদি ফাঁকি দিয়ে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার এবং অবৈধ উপায়ে সরকারি জমি দখলে রাখার অভিযোগ।’
এছাড়াও বলা হয়েছে, ‘বর্ণিত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।’
ধনকুবের ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান দুদকের নোটিশের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, তিনি এখনো হাতে পাননি দুদকের নোটিশ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, আপনাদের ফোনেই আমি বিষয়টি জানলাম। এর থেকে বেশি কিছু আমার জানা নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে ৫০ জনের করা তালিকাতেও নাম ছিল লতিফুরের। তালিকাতে নাম থাকার পরও তার বিরুদ্ধে সে সময় কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
দেশের প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো এবং ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের মালিকানা ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান।
১৯৯৮ সালে বাংলা দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাটি ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানায় প্রকাশ হয়। এদিকে মোহাম্মদ আলীর ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ১৯৯১ সালে প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তা কিনে নেয় ট্রান্সকম গ্রুপ।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বিকাশে অনেক ভূমিকা থাকার পরও ট্রান্সকমের মালিকানা পত্রিকা দুটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে অপপ্রচারের অভিযোগ উঠে। বিশেষ করে পদ্মাসেতু ইস্যুতে তাদের আলোচনা ছিল শীর্ষে।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে যখন দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগের দিকে আঙুল তুলে সেই মুহূর্তে তা অনুসরণ (ফলাও) করে প্রচার করতে থাকে ট্রান্সকমের মালিকানা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা দুটি।
এমনকি তারা সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে ঘিরে বিভিন্ন ধরণের ব্যাঙ্গাত্মক লেখাও প্রকাশ করে। কিন্তু যখনই পদ্মা সেতুর অভিযোগকে মিথ্যে বলে দাবি করে কানাডার আদালত, তা আর ফলাও করে প্রচার করেনি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার।
এখানেই শেষ নয় ট্রান্সকম মালিকানা পত্রিকা দুটির সমালোচনা। এছাড়াও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার রাজধানীর মেট্রোরেলের রুট প্রকল্পে জটিলতা তৈরিতে সমালোচনা করে। রুট নিয়ে নাগরিক সমাজের একাংশের আন্দোলনের ফলে প্রকল্পটি তিন বছর পিছিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ট্রান্সকম গ্রুপ কেবল মাত্র গণমাধ্যম ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত নয়। এছাড়াও ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে ট্রান্সকম ফুড লিমিটেড, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক লিমিটেড, ট্রান্সকম কাস্টমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, বাংলাদেশ ল্যাম্পস লিমিটেড, টি হোল্ডিং লিমিটেড, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ট্রান্সক্র্যাফট লিমিটেড, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
চা চাষের মাধ্যমে শুরু হয় ট্রান্সকম গ্রুপের ব্যবসা। গ্রুপটির কর্ণধার লতিফুর রহমান নেসলে বাংলাদেশ, হোলসিম বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্টেরও চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি লিন্ডে বাংলাদেশ এবং ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ডের পরিচালক।
২০১৭ সালে রাজস্ব বোর্ড থেকে ‘কর বাহাদুর’ সম্মাননা প্রাপ্ত ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।