মধুকবির সাগরদাঁড়ি ও কপোতাক্ষ নদ !
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম যশোরের সাগরদাঁড়ি। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারী যশোরের সাগরদাঁড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম হয়। যদি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম না হতো হয়তবা সাগরদাঁড়িকে দেশ বিদেশের কেউ চিনত না। তাকে কেন্দ্র্র করে সাগরদাঁড়িতে গড়ে উঠেছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো (পুনঃ নির্মানাধীন),পর্যটন কেন্দ্র, মধুসূদন মিউজিয়াম,কপোতাক্ষের তীরে কবির স্মৃতি বিজড়িত ক্ঠাবাদাম গাছ,বিদায় ঘাট ও মধুপল্লি।
যশোরের কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত স্বনামধন্য এই কবির বাড়ি। কেশবপুরের মাইকেল গেট থেকে সোজা দক্ষিনে সাগরদাঁড়ি অবস্থিত।ইঞ্জিন ভ্যান,নছিমন,মাহিন্দ্রা বা ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল যোগে সাগরদাঁড়ি যাওয়া যায়। পথিমধ্যে সাগরদাঁড়ির পাশ্ববর্তী শেখপুরা নামক গ্রামে কবি শিশু বেলায় যে মসজিদে বসে ফারসী ভাষা শিখতেন সে মসজিদটি আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার কিছু দূর পরেই সাগরদাঁড়ি পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ির দত্ত বাড়িটি ১৯৬৫ সালের ২৬ অক্টোবর তদানিন্তন সরকার বাড়িটি পূরাকীর্তি হিসেবে ঘোষনা করে।বাড়িটির আওতায় ১৩ একর সম্পত্তি রয়েছে। মধুসূদন পরিবােেরর ব্যবহার্য কিছু আসবাবপত্র ও অন্যান্য স্মৃতি নিয়ে এ বাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মধুসূদন জাদুঘর ।স্থাপিত হয়েছে লাইব্রেরী।বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছে জাদুঘর ও মিনি চিড়িয়াখানা।কবির জন্মস্থান আজও একটি তুলসী গাছ দিয়ে সনাক্ত করা দেখা যায়।এখানে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ,বালিকা বিদ্যালয় ও মাদরাসা।এখানে রয়েছে কবির স্মৃতি বিজড়িত আম গাছ।স্থাপিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পার্ক ও কপোতাক্ষের তীরে গড়ে উঠেছে বাজার।
কথিত আছে ১৮৬২ সালে কবি যখন স্বপরিবারে সাগরদাঁড়িতে এসেছিলেন ,ধর্মান্তরিত হওয়ার কারনে তখন জ্ঞাতিরা তাকে বাড়িতে উঠতে দেয়নি। তিনি কাঠবাদাম গাছের গোড়ায় তাবু খাটিয়ে ১৪ দিন অবস্থান করে বিফল মনে কপোতাক্ষের তীর ধরে উত্তরে কিছুদুর হেটে বিদায় ঘাট থেকে কোলকাতার উদ্দেশ্যে বজরায় উঠেছিলেন।
দত্তবাড়িটি বর্তমানে প্রততত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন থাকায় সেখানে প্রবেশের কিছু নিয়মনীতি রয়েছে।সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার। এছাড়াও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে এটি বন্ধ থাকে।উল্লেখ্য যে,এ বছর ১৬ ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাড়ির নিরপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কাষ্টোডিয়ান মহিদুল ইসলাম জানান শিশু,কিশোর, প্রবীন, প্রতিবন্ধিদের জন্য বিনা টিকিটে প্রবেশের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।তিনি পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের জোর সুপারিশ করেন।
প্রতিবছর মাইকেল মধুসদনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সং¯ৃ‹তি মন্ত্রনালয় ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে ২৫ জানুয়ারী থেকে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা উদযাপিত হয়।এ মেলায় যাত্রা,পুতুল নাচ,যাদু ও সার্কাস সহ দেশ বিদেশের মধুভক্ত পর্যটকবৃন্দসহ দেশ বরেন্য ব্যক্তি বর্গের পদভারে মেলাটি আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে।
এলাকাবাসী সাগরদাঁড়িতে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
স্টাফ রিপোর্ট : আব্দুস সালাম ( খুলনা টিভি )