যশোরের নীল বিদ্রোহে নমঃশূদ্র নায়ক নীলচাষীদের ইতিহাস এ কেমন!

খুলনা বিভাগ

অনিক যশোর: নীল বিদ্রোহে নমঃশূদ্র নায়কেরা ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যশোর অঞ্চলে নীলচাষের ক্রমোন্নতির কাল বলা হয়। বঙ্গদেশে নীল চাষের সংবাদ ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দের থেকে ২৯ অক্টোবরের সরকারি ঘোষণাপত্র থেকে জানা যায়।

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে যশোরের অন্তর্গত রূপদিয়াতে বন্ড সাহেব প্রথম কুঠি নির্মাণ করেন। অতঃপর যশোরের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক নীলকুঠি নির্মিত হয়। কিন্তু নানা কারণে ১৮৬০ অব্দে নীল বিদ্রোহ উপস্থিত হয়। এই নীল বিদ্রোহে যশোরের অন্তর্গত চৌগাছা গ্রামের বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

তাঁরা উভয়ে নীলকুঠির দেওয়ান ছিলেন। কুঠিয়ালদের অত্যাচারে তাদের হৃদয় কেঁদে ওঠে। তারা কাজে ইস্তফা দিয়ে প্রজার পক্ষে দাঁড়িয়ে গেলেন। এই নীলচাষীদের অনেকেই ছিলেন নমঃশূদ্র জাতির। কারণ নমঃশূদ্রদের বেশিরভাগ ছিলেন কৃষিজীবী।

বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে নীলচাষীদের প্রকৃত অবস্থা বুঝে কুঠিয়ালদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুললেন। নীল বিদ্রোহের বহিৃ অনেকদিন ধরেই ধূমায়িত হচ্ছিল। কিন্তু এই চৌগাছায় সর্বপ্রথম জ্বলে উঠলো।

দুই বছরের মধ্যে এই বহিৃ সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ল। বিশ্বাসদিগের যা কিছু ছিল তা সবকিছু এই বিদ্রোহ সংক্রান্ত কাজে ব্যয় করলেন। প্রজার জোট ভাঙার জন্য নীলকরেরা ক্ষেপে গেলেন। বিশ্বাসরা বরিশাল থেকে আরো অনেক নমঃশূদ্র লাঠিয়ালকে আনলেন।  দেশের আরও অনেক নীলচাষী লাঠি ধরলেন। বঙ্গের মান সম্মান রক্ষার  উপাদান রূপে লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে উঠল।

নীলকরের হাজার হাজার লোক এসে বিষ্ণুচরণের বিদ্রোহী গ্রাম চৌগাছা সহসা আক্রমণ করল। অনেক রক্তপাত হলো। কিন্তু ধরতে পারলেন না দুই ভাইকে। তারা রাতের অন্ধকারে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নীলচাষীদের জাগাতে চেষ্টা করলেন। চাষিরা কোন নীল বুনলেন না। দেড় বছরের মধ্যে কাটগড়া কানসরনস বন্ধ হয়ে গেল। নি:শ্ব প্রজার নামে নালিশ হলে তারা দু’জনে জরিমানা বা দাদনের টাকা ও মোকাদ্দমা খরচ দিয়ে দিতেন। কেউ জেলে গেলে তার পরিবার প্রতি পালন করতেন।

এইভাবে তারা সর্বস্বান্ত হলেন। সর্বস্ব ১৭ হাজার টাকা এই কাজে ব্যয় করলেন। জমিদারদের নিরিখে ১৭ হাজার টাকা সামান্য বটে কিন্তু টাকার অনুপাতে তাদের দ্বারা সম্পাদিত কাজের মূল্য অনেক বেশি। তাঁরা ছিলেন নীল বিদ্রোহের অগ্রদূত। তাদের অনুসরণে আরো অনেক গ্রাম্য বীর ও নেতার আবির্ভাব হয়েছিল।

তাদের নাম হয়তো ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই। কিন্তু তাদের বিরত্ব, স্বার্থত্যাগ ও মহাপ্রাণতার কথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই নীল বিদ্রোহ কত কৃষক প্রাণ দিয়েছিলেন কে কার খবর রাখে? এখনো কৃষকের মুখে মুখে গ্রাম্য সূরে শোনা যায়,

“মোল্লাহাটির লম্বা লাঠি, রইল সব হুদোর আটি/কলকাতার বাবু ভেয়ে, এলো সব বজরা চেপে/লড়াই দেখবে বলে”

খুলনা টিভি/khulnatv

Tagged

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.