চানাচুর বিক্রেতা ও ডিসের ব্যবসা থেকে এমপি প্রার্থী হিরো আলম!khulna tv

আচার বিক্রেতা ও ডিসের ব্যবসা থেকে এমপি প্রার্থী হিরো আলম!

বাংলাদেশ

আচার বিক্রেতা ও ডিসের ব্যবসা থেকে এমপি প্রার্থী হিরো আলম!

স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল তিনি। সেখান থেকে এখন হচ্ছেন খবরের শিরোনাম। দেশের গণমাধ্যম ছাড়াও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাকে নিয়ে ফিচার প্রকাশ করছে। তিনি হিরো আলম। অনলাইন ভিডিও প্লাটফর্ম ইউটিউবে বাংলা ছবির বিভিন্ন গানের ভিডিও বানিয়ে এবং তাতে অভিনয় করে এসেছেন আলোচনায়। ঢাকাই চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে তাকে নিয়ে ট্রোল হলেও স্বপ্ন পূরণে থেমে নেই তার যাত্রা। প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু নিয়ে আলোচনায় থাকছেন তিনি । হচ্ছেন খবরের শিরোনাম। সম্প্রতি বগুড়া-৪ আসনে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জাতীয় পার্টি থেকে কিনেছেন মনোনয়নপত্র। স্বপ্ন এবার সংসদ সদস্য হওয়া! সে স্বপ্ন পূরণের পথেই ছুটছেন তিনি।

হিরো আলমকে নিয়ে অনেকে হাস্যরস ও ট্রোল করলেও তিনি কিন্তু তার গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছেন। তার এ এগিয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে অনেক গল্প। রয়েছে সংগ্রাম। হিরো আলম তখন ছোট। সবে সপ্তম  শ্রেণিতে পড়েন। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় সেই ছোট বয়সেই ধরতে হয় সংসারের হাল। ফলে চুকে যায় লেখাপড়ার পাট। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মায়ের বানানো আচার-চানাচুর বিক্রি করা শুরু করেন। দিনশেষে মা আনোয়ারা বেগমের হাতে অর্জিত টাকা তুলে দিতেন। আর সন্ধ্যার পর এরুলিয়া বাজারে একটি সিডি ভাড়া দেওয়ার দোকানে বসতেন। এভাবেই কেটে যায় টানা তিন বছর।

পরে একদিন দোকানের মালিক শহীদুল ইসলাম চলে যান মালয়েশিয়ায়। দোকানের মালপত্র বিক্রি করে দেন দোকানের কর্মচারি হিরো আলমের কাছে। সেই শুরু হয় নতুন পথ চলা। হিরো আলমের ভাষায়, ‘মালিক চলে যাওয়ার আগে আমাকে বলেন দোকান বিক্রি করে দিবেন। আমি মায়ের সঙ্গে আলাপ করে ১৬ হাজার টাকায় দোকানের সব মালপত্র কিনে নেই। দোকানে পেয়েছিলাম, একটা সাদাকালো টেলিভিশন, একশ’ সিডি ও কিছু ভিসিআরের ক্যাসেট। সেই সিডির দোকানে ভালো আয়-রোজগার শুরু হয়। পরে আচার-চানাচুর বিক্রি বাদ দেই। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুঁজি।’

কী ছিল সেই স্বপ্ন? জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘মেরিনা সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতাম। নায়ক নায়িকারা নাচতেন। আমি সেই গানগুলোতে নাচার স্বপ্ন দেখতাম।’

পরে টাকা-পয়সা খরচ করে একটা কমেডি গানের ভিডিওতে মডেল হন আলম। সেই গান বের হয় ভিডিও ক্যাসেটে। ভিডিওর সেই সিডি ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। আলম মনে মনে বেশ খুশি, কারণ টিভিপর্দায় তাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামের অনেকেই খুশি হতে পারছিলেন না আলমের এইসব ‘পাগলামো’তে।

আলম বলেন, ‘গ্রামের লোকজন আমাকে গালি দিতো। আমি কেন এমন জোকারগিরি করছি। কেন এমন ফালতু জিনিস বানাচ্ছি। মুরুব্বিদের অনেকে আমাকে ডেকে নিয়ে বলতেন, এইসব করে কী হবে? তার চেয়ে বরং টাকা খবচ করে হিরো হও। আমার মাথায় এটা বসে গেলো। টাকা যেহেতু খরচ করছি; হিরো হওয়ার পিছনেই করবো।’

এরপর স্থানীয় এক এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এলাকায় ডিশ সংযোগের ব্যবসা শুরু করেন আলম। পাশাপাশি বানান বিভিন্ন গানের মিউজিক ভিডিও। তাতে মডেল হন নিজেই। ডিশে সেই গান প্রচার করেন। এভাবে একে একে প্রায় ছয়শ’ মিউজিক ভিডিও করে ফেলেন আলম। শুধু আলম থেকে হয়ে উঠেন ‘হিরো আলম’।

হিরো আলম

এরপর ২০০৯ সালে পাশের গ্রামের সুমী নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। সুমী এসএসসি পাস। আবির ও আলো নামে দুই সন্তান রয়েছে তাদের। সংসার আর ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন হিরো আলম। পাশাপাশি কিছু মিউজিক ভিডিও করেন। সেগুলো নিজের ক্যাবল চ্যানেলেই প্রচার করেন। গ্রামের মানুষ এবার তাকে বাহবা দেয়। সেই বাহবা থেকে উৎসাহ পান আলম।

২০১৬ সাল। বছরটা হিরো আলমের জন্য অনেক গুরুত্বের। কারণ এ বছরের মাঝামাঝি  হুট করেই ফেসবুকে আলমের কয়েকটি মিউজিক ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও হৈচৈ ফেলে দেয়। আলমকে খুঁজে বের করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

ওই বছরে গুগলে তাকেই সবচেয়ে বেশি খোঁজে মানুষ। আলমের এই জনপ্রিয়তা নজরে আসে চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও। ঢাকার কয়েকজন উঠতি নির্মাতা তাকে নিয়ে কয়েকটি মিউজিক ভিডিও এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

আলম বলেন, ‘প্রথম যখন মিউজিক ভিডিও বানাই তখন কেউই আমার সঙ্গে মডেল হতে চাইত না। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে তাদের নিতাম। এখন অনেকেই আমার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ চায়। সিনেমার পর্দায় নায়কের মারামারি দেখে একদিন অবাক হয়েছিলাম, এখন আমি নিজে নায়ক হয়ে মারামারি করি, লোকে সেটা দেখছে। এই যে এমপি হতে মনোনয়ন পেপার নিয়েছি সবাই আলোচনা-সমালোচনা করছে- এটাই আমার প্রাপ্তি।’

হিরো আলম আরও বলেন, ‘এলাকার মানুষের ভালোবাসা আর আর্শিবাদ আমার সঙ্গে রয়েছে। আর আমার রয়েছে ইচ্ছাশক্তি। আমার বিশ্বাস মনোয়ন পেলে আমি বিজয়ী হবো। এখন আমার মনোনয়নপত্র নেওয়া নিয়ে যারা হাসছেন, তারা শুরু থেকেই আমার সব কাজে হাসছেন। আমি তো থেমে থাকিনি। থাকলে আজকে দেশ-বিদেশের মানুষ আমাকে চিনতো না।’

Tagged

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.