পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদলি; বহাল তবিয়তে আছে
দুর্নীতির হোতা সার্ভেয়ার কাওসার ও কানুনগো মোজাম্মেল
নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনা কপিলমুনির ঐতিহাসিক মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বাহাদুর সহ দুই জন প্রভাবশালী সচিব ও এলাকার সংসদ সদস্য সহ সুধীজনের প্রচেষ্টায় কপিলমুনিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে সরকারি খাস জায়গায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও কমপ্লেক্স নির্মাণ নিয়ে ইদুর বিড়াল খেলা শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় দূর্ণীতিবাজ ব্যক্তিরা।
ইতোমধ্যে এতদাসংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন পত্র পত্রিকা সহ দৈনিক চৌকসে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবার পর পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খালিদ হাসান সিদ্দিকীকে আকস্মিকভাবে বদলি করা হয়। অথচ দুর্নীতির মূল হোতা উপজেলার
সার্ভেয়ার কাওসার আলী ও কানুনগো মোজাম্মেল হক রয়েছে বহাল তবিয়তে।
এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মুজিববর্ষের ঘর বরাদ্দের নামে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রকৃত দুস্থ অসহায় গৃহহীন মানুষদের ঘর না দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সচ্ছল ব্যক্তিদেরকে ঘর বরাদ্দ দিয়েছে। এবং এসব অবৈধ কারিশমা বাস্তবায়নে নির্বাহী কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে কতিপয় দুর্নীতিবাজরা হাতিয়েছে কোটি কোটি টাকা। অবস্থাদৃষ্টে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের ভাবখানা এমন “উলটপালট করে দে মা লুটেপুটে খায়”।
সচেতন মহলের মতে এই ঘটনার সূত্র ধরে সঠিক তদন্ত করলে বেরিয়ে পড়বে দুর্নীতিবাজদের নেপথ্যের থলের বিড়াল। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও পাইকগাছায় কতিপয় দূর্ণীতিবাজ প্রশাসন আর তাদের নিয়োজিত দালালদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে সুযোগসন্ধানী দুর্নীতিবাজরা কৌশল হিসাবে এবং অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিতে শাসক দলের পরিচয় দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অপকর্ম সহ সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ দখলের মহড়া। যার কারণে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে এই জনপদে।
ভুক্তভোগী সহ সচেতন মহলের দাবি, দুদক কর্তৃক পাইকগাছায় চাকরীরত কতিপয় বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এদের সহযোগীদের অবৈধ অর্থের উৎস সহ আয়ের বহির্ভূত সম্পদের তদন্ত করলে বেরিয়ে পড়বে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর সব কাহিনী। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে পাক বাহিনীর দোসর রাজাকারদের পরাস্ত করে ৯ মাসে দেশকে স্বাধীন করে ছিনিয়ে আনেন লাল-সবুজের পতাকা। তারই ধারাবাহিকতায় কপিলমুনির মুক্তিযোদ্ধারা ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ১৫৬ জন রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে কপিলমুনিকে কলঙ্কমুক্ত করেন।
অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণে আর কপিলমুনির যুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য আগামী প্রজন্ম তথা বাংলাদেশের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বাহাদুর সহ দুই জন প্রভাবশালী সচিব ও এলাকার সংসদ সদস্য সহ সুধীজনের প্রচেষ্টায় কপিলমুনিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে সরকারি খাস জায়গায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও কমপ্লেক্স নির্মাণ নিয়ে ইদুর বিড়াল খেলা শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিরা। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে তাদের তালবাহানা, অবৈধ দখলদারদের পক্ষে একটি মহলের সরাসরি ভূমিকা ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে চলছে কমপ্লেক্সের জায়গা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন আর দখলকারীদের মধ্যে রশি টানাটানি।
এব্যপারে পত্রিকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণের জায়গা নিদ্ধারণে রায় সাহেবের ভিপি সম্পত্তি মাপ জরিপের সময় উপস্থিত নিবার্হী কর্মকর্তা স্পষ্ট ভাবে সার্ভেয়ার ও কানুনগো কে বলেছিলেন মাপজোপের নামে আপনারা এখান থেকে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে খাবেন আর এর দায়ভার আমাকে নিতে হবে এটা আমি কখনো হতে দেব না। একইভাবে তিনি ঘোষণা দেন, রায় সাহেবের যেসব সম্পদ বেদখলে আছে তা চিহৃত করে তিনি উদ্ধার করবেন। সেই মর্মে সিএস এবং আরএস ম্যাপ দেখে গত ৩০ আগষ্ট কপিলমুনির প্রধান সড়কের ফকিরবাসা মোড় এলাকায় জরিপ কাজ পরিচালনা করেন। আর এই ঘটনার চার দিনের মাথায় অজ্ঞাত কারণে তাকে আকস্মিকভাবে বদলি করা হয়।
ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ বলছে স্বয়ং মন্ত্রী বাহাদুর সহ প্রভাবশালী দুইজন সচীবের উপস্থিতিতে কমপ্লেক্স নির্মাণে সরকারি জায়গা উদ্ধারে নির্বাহী কর্মকর্তার গাফিলতি সহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে তাকে বললি করা হয়েছে। অন্যদিকে এও শোনা যাচ্ছে নিবার্হী কর্মকর্তা সরকারি সুমদয় সম্পত্তি উদ্ধারের অটল থাকায় এবং সিএস/আর এস ম্যাপ অনুযায়ী সম্পত্তি উদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহনের কারণে সঙ্ঘবদ্ধ ভূমিদস্যুরা প্রভাব খাটিয়ে তাকে বদলি করেছে।
তবে ঘটনা যাই ঘটুক মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্মের মন্তব্য, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি অক্ষুন্ন রাখতে এবং রায় সাহেবের বাড়িটি দখলদারদের কবলে থেকে অবমুক্ত করা
এখন সময়ের দাবি। কারণ কপিলমুনি যুদ্ধের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী রায় সাহেবের এই বাড়িটি। (চলবে)