সাব্বির হোসেন: খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এম এ বারী লিঙ্ক রোড দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড থেকে জয়বাংলা মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কটি খানাখন্দে ভরা।
ছোট-বড় গর্ত, বালি, খানাখন্দে যেন নাভিশ^াস ওই রোডে বসবাসকারী লোকজন ও ব্যবসায়ীদের। দীর্ঘদিন সেবাদাতা সংস্থাগুলোর কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় এবার নিজেরাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংস্কারকাজ শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে এ সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। নগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন এই কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, এম এ বারী লিঙ্ক রোড মহানগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত বাস, ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন প্রবেশ করে। এছাড়া সড়কের দু’ধারে অন্তত তিনশত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কটিতে ভাঙ্গা ও খানাখন্দ থাকায় ক্রেতা সাধারণ সড়কটিতে প্রবেশ করতে চান না। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অনেকে বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
একই সাথে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছিল। বর্ষার কাদাপানি জমে গর্ত ও খানাখন্দ দিন দিন বড় হচ্ছিল। রাস্তাটি নিয়ে বিপাকে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা জমে। তখন যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটে চলাচল ও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে, যা প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। অবশেষে নিজেরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে ও স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার্থে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, বুধবার সকালে বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়ুর ব্রিজ পর্যন্ত ৭৮০ মিটার সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। যা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এ দু’দিনে সড়কটিতে ইট-বালু, সরকি দিয়ে খানা-খন্দ ভরাট করে জনগণ ও যানবাহনের চলাচলের উপযোগী করা হবে। যাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা অন্তত কিছুদিন চলাচলের সুবিধা পান। পরবর্তীতে অবস্থায় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই রোডের ব্যবসায়ী তাকবীর মটরস্ এর পরিচালক সুমন আহমেদ বলেন, বারবার ধর্ণা দিয়েও কর্তৃপক্ষ সড়কটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এতে আমাদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ক্রেতা সাধারণ এই রোডে আসতে চান না। এবার নিজেদের সমস্যা দূরীকরণে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এসেছেন। এটি আসলেই প্রশংসনীয়।
কামরুল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. কামরুজ্জামান বলেন, এই রোড সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। ক্রেতারা এই রোডে না আসায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে ইতোমধ্যে একটি দোকান ছেড়ে দিছি। কেসিসি-কেডিএকে জানিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় অবশেষে ব্যবসায়ীরা সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
উল্লেখ্য, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বাইপাস সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালের ৩০ জুন। কাজ শেষ হওয়ার কিছু দিন পর খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও এলজিইডিকে সড়কটি হস্তান্তর করে কেডিএ (খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। সড়কটির মহানগর অংশ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) এবং বাকি অংশ এলজিইডির।
কিন্তু কাজটি নিম্নমানের হয়েছে দাবি করে প্রথম থেকেই রক্ষণাবেক্ষণে আপত্তি জানায় কেসিসি। সেই থেকে কেসিসি-কেডিএ সমন্বয়হীনতার কারণে সড়কটি সংস্কারের অভাবে পড়ে আছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।