ডেসটিনির রফিকুল আমিন ও মুহাম্মদ হুসাইন সহ অন্যদের মুক্তির দাবিতে সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন!
ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুক্তি দাবি করেছেন ক্রেতা পরিবেশকরা। শনিবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ডেসটিনি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতা-পরিবেশক আয়োজিত মানববন্ধনে এই দাবি করা হয়।
এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাত হয়ে যাচ্ছে ডেসটিনির সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। প্রায় সাড়ে ৬ বছর প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। তারা আরো বলেন, জীবিকার জন্য ডেসটিনির ওপর নির্ভরশীল ২ কোটি মানুষ। তবে আমাদের আশা আছে, আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এ সময় অনেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ডেসটিনির শীর্ষ কর্তা মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসাইন বিনাবিচারে জেলে থাকার কারণে আমরা অবরুদ্ধ। ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ। অজ্ঞাত কারণে তারা কারামুক্ত হতে পারছেন না। কাদের স্বার্থে তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তারা কারাগারে থাকায় ৭ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। আমরা ৪৫ লাখ পরিবারের আড়াই কোটি ভোটার। আমরা এদেশের সন্তান। এদেরই নাগরিক। আমরা রোহিঙ্গা নই। আজ আড়াই কোটি মানুষ মানবেতর বসবাস করছেন। এতে ১৩ লাখ নারীও ডেসটিনির সঙ্গে জড়িত। খরচ যোগাতে না পারায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডেসটিনির মুক্তি দিন। মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসাইনের মুক্তি দিন। ডেসটিনিতে কাজ করে আমরা ভালই ছিলাম। আমরা তো দুদকে অভিযোগ করিনি। কার সার্থে দুদক মিথ্যা মামলা করেছে। বিনাবিচারে প্রায় ৭ বছর কারাগারে থাকতে পারেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের সাথে বসুন। মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসাইনের মুক্তির জন্য আজ আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। গাঁছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্র। এগুলো আমাদের সম্পদ।
ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
টাঙ্গাইল জেলা থেকে আসা বিনিয়োগকারী আতিকুর রহমান আক্কাছ বলেন, আমি ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর ক্রেতা পরিবেশক। ডেসটিনি মালটিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর সদস্য ও শেয়ার হোল্ডার। ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডের বৃক্ষরোপণ প্যাকেজের মেয়াদী বিনিয়োগকারী করেছি।
ময়মনসিংহ জেলা আসা বিনিয়োগকারী মোঃ মাসুদ পারভেজ বলেন, এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কুমিল্লার বিনিয়োগকারী মোঃ সাইফুল ইসলাম উল্লেখ করে বলেন, ডেসটিনি-২০০০ লিঃ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ হোসাইন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন কারাগারে থাকায় ৪৫ লাখ মানুষ ডেসটিনি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতা-পরিবেশক। কাজ করার সুযোগ না থাকায় এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন ভাতা না পেয়ে প্রায় ৬ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা তার মুক্তি দাবি করছি। মাননীয় আদালত বিষয়টি সুনজরে দেখবেন।
রংপুরের বিনিয়োগকারী আজম আলী বলেন, আলহাজ্ব মোহাম্মদ হোসাইন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন কারাগারে থাকায় লাখ লাখ লোক পথে বসে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের জীবনযাপন চলছে কষ্টে। আলহাজ্ব মোহাম্মদ হোসাইন ও রফিকুল আমীনকে মুক্তি দিয়ে অসহায় মানুষদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। যশোরের বিনিয়োগকারী তোফাজ্জেল মানিক বলেন, ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের জামিন অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ৪৫ লাখ ডেসটিনি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতা-পরিবেশক। অবিলম্বে দুই শীর্ষ কর্মকর্তার মুক্তি দাবি করছি। তিনি আরও দাবী করে বলেন, তাদের মুক্তি দিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করে ডেসটিনির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এদেশেরই ৪৫ লাখ ক্রেতা-পরিবেশকসহ তাদের পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন। বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ডেসটিনির সম্পত্তি লুটেপুটে খাচ্ছে।
বিনিয়োগকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আলহাজ্ব মোহাম্মদ হোসাইন ও রফিকুল আমীন দোষী হলে তার বিচার হবে। কিন্তু বিচার না করে দিনের পর দিন তাকে জেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৪৫ লাখ ডেসটিনি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতা-পরিবেশক, সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কুমিল্লার বিনিয়োগকারী নাছরিন আজাদ বক্তব্যে বলেন, আলহাজ্ব মোহাম্মদ হোসাইন ও রফিকুল আমীন প্রায় ৬ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। জামিন পাওয়া তার মৌলিক অধিকার। কিন্তু তাকে বারবার জামিন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বিনিয়োগকারী শারমিন আক্তার স্বর্ণা বলেন, আমরা বঞ্ছিত, অবহেলিত এবং সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে লাঞ্ছিত বিনিয়োগকারীরা আজ আপনাদের মাধ্যমে এদেশের সচেতন সুধী সমাজ, বিচার বিভাগ, প্রশাসন সহ সর্বশেষে আপনাদের মাধ্যেমে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিকট আকুল আবেদন জানাইতেছি যে, আমাদের প্রাণ প্রিয় পরিচালকদ্বয় সর্ব জনাব মোহাম্মদ হোসাইন ও মোহাম্মদ রফিকুল আমীনকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি দিন। আমাদের ডেসটিনি গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খুলে দিন। আমাদের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড চালু করে আমাদেরকে কর্মহীন জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে পুনারায় কাজ করে রুজি রোজগার করে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিন।
বি. বাড়ীয়ার বিনিয়োগকারী মোঃ ওয়াসিম আকরাম বলেন, আপনি আমাদের অভিভাবক ও বিপদের বন্ধু, আপনি শুধু দেশের নেত্রী নন। তাই আপনার কাছেই বিশেষ আকুল আবেদন, আপনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করে ৪৫ লাখ পরিবারকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচান। আমরা আজ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি। ডেসটিনির ব্যবসা আমাদের সাথে কোন প্রতারণা করেনি। বরং আমরা সবাই ভালো আয় রোজগার করে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই জীবন যাপন করছিলাম।
ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
বিনিয়োগকারী মোঃ শরিফুল ইসলাম গাজী বলেন, আপনি আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। আমরা প্রতিজ্ঞা করছি ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবসা করে আয় করব। ডেসটিনি শীর্ষ কর্মকর্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আজ প্রায় ৬ (ছয়) বছর আমরা বেকার জীবন যাপন করছি। তাই আমরা দ্রুত এই বেকার জীবনের অবসান চাই।
লাখসাম বিনিয়োগকারী ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন যে, JUSTICE DELAYED, JUSTICE DENIED. আজ প্রায় ৬ বছর ২ মাস যাবত দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা দুটির বিচারিক কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে। ইতি মধ্যে নিম্ন আদালত চার্জ গঠনের নিমিত্তে ১৫০ টি শুনানি হয়েছে। কিন্তু দ্রুত সমাধানের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই দিকে দখল বাজ দুর্বৃত্তরা ডেসটিনি গ্রুপের অরক্ষিত স্থাবর সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যাচ্ছে। পরিচালকদের অবর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করে আমাদের কস্টারজিত টাকায় খরিদ করা জমি সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। আমাদের অফিস সমূহ থেকে দামী আসবাব পত্র লুট করে বাইরে বিক্রি করে দিয়ে অফিস ঘর দখল করে নিয়েছে। অথচ আমরা প্রশাসনের সহযোগিতার অভাবে কিছুই করতে পারছি না।
বিনিয়োগকারী সিরাজাম মুনির তার বক্তব্যে বলেন, মোহাম্মদ রফিকুল আমীন দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থাকায় এ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনভাতা পাচ্ছেন না। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি যাতে আলহাজ্ব মোহাম্মদ হোসাইন ও রফিকুল আমীনকে মুক্তি দিয়ে এ সকল প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে সহায়তা করেন। ডেসটিনি আমাদের সাথে কোনো প্রতারণা করেনি। বরং আমরা ডেসটিনিতে কাজ করে সুখে জীবনযাপন করছিলাম।
ফেনী থেকে আগত বিনিয়োগকারী মোঃ মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, প্রিয় গণমাধ্যমের বন্ধুরা। ভাই আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের ওই সকল সম্পদ রক্ষার স্বার্থে আমাদের শীর্ষ দুই পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ হোসাইন ও মোহাম্মদ রফিকুল আমীনকে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনে মুক্তি দিন। ডেসটিনি গ্রুপের ৪৫ লাখ পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচান। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। আমরা মোহাম্মদ রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসাইনের মুক্তি চাই।
এছাড়া আর ও বক্তব্য রাখেন, হালিমা খাতুন, বিশ্বনাথ পোদ্দার, এটি এম খুরশিদ আলম, মোঃ ইকবাল, কাজল কুমার শাহা, সাইফুল ইসলাম মানিক, মোঃ আমিনুল ইসলাম, মোঃ আরিফুর রহমান পরশ, মোঃ শহিদ হোসেন। সার্বিক সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ফেনী হতে আগত বিনিয়োগকারী মোঃ আব্দুর রহিম ও কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে আগত বিনিয়োগকারী মোঃ আবুল হাছান। ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এর আলহাজ্ব মোহাম্মদ হোসাইন ও রফিকুল আমীনের মুক্তির জন্য দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকার বিনিয়োগকারী মোঃ শাহ্জালাল আনছারী এবং এর মধ্যে দিয়ে মানববন্ধন শেষ ঘোষণা করা হয়।
স্টাফ রিপোর্ট : আমরা ডেসটিনি পরিবার।
সূত্র: khulna tv