দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক ঘোষণা ৬৫ বছর পর স্থায়ী শান্তির পথে_khulnatv

দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক ঘোষণা ৬৫ বছর পর স্থায়ী শান্তির পথে

আন্তর্জাতিক

দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক ঘোষণা ৬৫ বছর পর স্থায়ী শান্তির পথে

কোরিয়া উপদ্বীপে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। এ লক্ষ্যে বিভক্ত উপদ্বীপটিকে পূর্ণাঙ্গ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারেও ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তাঁরা। গতকাল শুক্রবার বহুল আলোচিত, ঐতিহাসিক ও আন্তরিকতায় ভরপুর এক শীর্ষ বৈঠকে এ ঘোষণা দেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা মুন জায়ে ইন।

বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ত্যাগের বিনিময়ে কোনো শর্ত আরোপের কথা জানা যায়নি। অতীতে উত্তর কোরিয়া তার ‘নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রত্যাহার দাবি করেছিল, যা ওয়াশিংটনের পক্ষে মানা অসম্ভব বলে মনে করা হয়। এর ফলে দুই কোরিয়ার শান্তি স্থাপন ভেস্তে গিয়েছিল। এবার সে রকম কোনো শর্ত জানা না গেলেও উত্তর কোরিয়ার আন্তরিকতা প্রদর্শন ছিল লক্ষণীয়।

দুই কোরিয়ার ‘সামরিকায়নমুক্ত অঞ্চল’ পানমুনজমের দক্ষিণ কোরিয়ার অংশে গতকাল এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধ সমাপ্তির পর দুই কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক বিভক্তির পর এই প্রথম কোনো উত্তর কোরীয় নেতা দক্ষিণ কোরিয়া সফর করলেন। এ নিয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে ২০০০ ও ২০০৭ সালের পর তৃতীয়বারের মতো শীর্ষ  বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দুই নেতা যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, যা এর মধ্যেই পানমুনজম ঘোষণা বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিবৃতিতে চলতি বছরেই ৬৫ বছর আগের কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা দিতেও একমত প্রকাশ করেন দুই নেতা।

এই বৈঠক ও এই দিনটি নানা কারণেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। অতিশয় প্রতীকী করমর্দন, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরা, আবেগময় উক্তি, লাল গালিচা সংবর্ধনা ও সামরিক বাহিনীর গার্ড অব অনারসহ নানাভাবে আন্তরিকতার প্রদর্শন দেখা গেছে এই বৈঠকে। উত্তর কোরিয়া কোনো নেতার প্রথম দক্ষিণ কোরিয়া সফর ছাড়াও যৌথ বিবৃতিটাও ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে।

দুই কোরিয়ার সীমান্ত ‘মিলিটারি ডিমারকেশন লাইনের’ কাছে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক শেষে দুই নেতা ‘পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি কোরিয়া উপদ্বীপের অভিন্ন লক্ষ্য’ শীর্ষক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। এই বিবৃতি স্বাক্ষরের সময় দুই নেতা বিশ্ব মিডিয়ার সামনে উষ্ণ আলিঙ্গন ও বন্ধুত্ব প্রদর্শন করেন।

বৈঠকে দুই নেতা চলতি বছরেই ৬৫ বছর আগের কোরিয়ার যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি ঘোষণা করবেন বলে একমত হন। একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া প্রেসিডেন্ট মুন আগামীতে পিয়ংইয়ং সফরে যাবেন উল্লেখ করে উভয় দেশের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক ও সরাসরি টেলিফোন সংলাপ অনুষ্ঠানে একমত হন।

আরো পড়ুন :কালোজিরার উপকারিতা মৃত্যু ব্যতীত সর্বরোগের ‘মহৌষধ’

পানমুনজম ঘোষণার এই অসাধারণ দিনটি এক মাস আগেও অচিন্তনীয় ব্যাপার ছিল। একের পর এক পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কারণেই এমনটা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেট বাস্তবে রূপ নিল।

পানমুনজমে দুই দেশের সীমানা নির্দেশক ‘কংক্রিট ব্লক’ অতিক্রম করার পর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলেন, তিনি ‘আবেগে ভরপুর’। কারণ এর মধ্য দিয়েই উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতার দক্ষিণ কোরিয়ায় পা পড়ছিল। পরে দুই নেতা হাস্যোজ্জ্বলভাবে সেখানে অবস্থিত ‘পিস হাউস বিল্ডিং’য়ের দিকে হেঁটে যান। এ সময় কিম বলেন, ‘আমি নতুন ইতিহাস তৈরির পদক্ষেপের পথে একটি শুরুর বার্তা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এখানে এসেছি।’

পরে দুই নেতা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে উত্তর কোরিয়ার নেতা বলেন, দুই কোরিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তাঁরা দুর্ভাগ্যের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন না।

এর আগে ২০০০ ও ২০০৭ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে দুটি শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুটি বৈঠকই অনুষ্ঠিত হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে। ওই দুই বৈঠকও শেষ হয়েছিল আন্তরিকতা ও একই রকম প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠায় তা ব্যর্থ হয়।

গতকালের বৈঠক শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা মুন জায়ে উন বলেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণাটি ‘খুবই তাৎপর্যপূর্ণ’। মুন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, তাঁদের মধ্যে আবারও সীমান্তে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকের ৪০ মিনিটের সকালের সেশন শেষ হলে দুপুরের খাবার জন্য কিম সীমান্ত অতিক্রম করে উত্তর কোরিয়ার অংশে যান। এ সময় কয়েক ডজন নিরাপত্তাকর্মী তাঁর সঙ্গে জগিং করতে করতে এগিয়ে যান। পরে দুপুরের সেশন শুরুর আগে দুই নেতা শান্তির প্রতীক হিসেবে সীমান্তরেখায় একটি বৃক্ষের চারা রোপণ করেন।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিনন্দন : দুই কোরিয়ার নেতার মধ্যে এই ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠানকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। সীমান্তে দুই নেতার করমর্দনকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে আখ্যায়িত করে পেইচিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা কোরিয়ান নেতাদের ঐতিহাসিক পদক্ষেপের তারিফ করছি এবং তাঁদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও সাহসকে স্বাগত জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতে দুই কোরিয়া সামনে এগিয়ে যাবে এবং সব ধরনের উত্থান-পতন শেষে তারা ভাই হিসেবে থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে চীন।

এক বৃিবতিতে যুক্তরাষ্ট্র এই বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে বলে, হোয়াইট হাউস আশা করে, এই শীর্ষ বৈঠক ভবিষ্যতে শান্তির পথে এগিয়ে যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় এই বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘কোরিয়া যুদ্ধ সমাপ্ত হচ্ছে! যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সব মহান নাগরিক কোরিয়ায় যা ঘটছে এ জন্য গর্বিত হওয়া উচিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভালো জিনিস ঘটছে। তবে সময়ই বলে দেবে।

সূত্র : এএফপি, সিএনএন।

Tagged

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.