প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন কেশবপুরের মীর্জানগর হাম্মামখানা!
বাংলার সুবেদার শাহ সুজার শ্যালকপুত্র মীর্জা সাফসি খান ১৬৪৯ খ্রি: যশোর ফৌজদার নিযুক্ত হন।তাঁর দায়িত্ব পড়ে এ অঞ্চল দেখাশুনা করার। তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সদর থেকে ৭ কি. মি.পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদ ও বুড়িভদ্রা নদীর সঙ্গমস্থল ত্রিমোহিনী নামক স্থানে বাস করতেন। তাঁর নাম অনুসারে এলাকাটির নাম হয় মীর্জানগর।কথিত আছে তিনি গোসলের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সুদর্শন একটি জায়গা নির্মান করেন যা হাম্মামখানা নামে পরিচিত।
৩শ ৬৭ বছরের প্রাচীন স্থাপত্য যশোরের কেশবপুরের মীর্জানগর হাম্মামখানা। ত্রিমোহিনী-কেশবপুর রা¯তার পাশ্বে মীর্জা নগরের নবাব বাড়ি এখন ভগ্ন¯তুপ বিশেষ, এই হাম্মাম খানা ঘিরে এখনো মানুষের মুখে আছে বহু কাহিনী ও ঘটনা। ঐতিহাসিক এই হাম¥ামখানাটিকে ঘিরে এখনো নানা ঘটনা ও স্মৃতি মানুষের মুখে মুখে বয়ে বেড়াছে।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, সম্রাট আওঙ্গজেবের আমলে নুরল খাঁ ফৌজদার নিযুক্ত হন। তিনি বুড়িভদ্রা নদীর দক্ষিন পাড়ে কিল্লাবাড়ি স্থাপন করে সেখানে বসবাস করতেন। সুবি¯তৃত পরিখা খনন করে আট দশ ফুট উচু প্রাচীর বেষ্টিত করে এটাকে মতিঝিল নামকরন করেন। এর একাংশে বতকখান, জোনানাসহ হাম্মামখানা (গোসল খানা) ও দূর্গের পূর্বদিকে সদর তোরন নির্মান করেছিলেন। কামান দ্বারা দূর্গটি সুরক্ষিত ছিল। মীর্জানগরের কামানের নলটি যশোরের মনিহারে মোড়ে শহীদদের বেদিতে সংরক্ষিত আছে।
হাম্মাম খানা বাদে আজ কিছুই অক্ষত নেই। চার কক্ষ বিশিষ্ট ও একটি কুপ সমেত হাম্মাম খানাটি মোগল স্থাপত্য শৈলীর অনুকরনে নির্মিত হয়। স্থাপনাটি চার গম্বুজ বিশিষ্ট এর পশ্চিম দিকে পরপর দু’টি কক্ষ। পূর্ব দিকের কক্ষ দু’টি উচু চৌবাচ্চা হিসাবে ব্যবহার করা হত। পূর্ব পাশ্বে দেয়াল বেস্টনীর ভেতরে রয়েছে ৯ ফুট ব্যাসের পোড়া মাটির ইটের তৈরি র্নিমিত সুগভীর কুপ যে কুপ হতে পানি টেনে তুলে এক ছাদের দু’টি চৌবাচ্চায় জমা করে রোদ্রে বা আগুনে গরম করে দেয়াল অভ্যতরে গ্রহিত পোড়ামাটির নলের মাধ্যমে স্নান কক্ষে সরবরাহ করা হত।
স্থাপনাটির দক্ষিন পাশ্বে একটি চৌবাচ্চা এবং সুড়ঙ্গ রয়েছে যা তোষাখানা ছিল বলে ধারনা করা হয়। ১৯৯৬ সালে প্রতœতত্ত¡ বিভাগ এটিকে পুরার্কীতি হিসাবে ঘোষনা করে। যশোরের কেশবপুরের মীর্জানগর হাম্মামখানায় দর্শনার্থী ও পর্যটকদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়। আজও বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক ও ভ্রমণ বিলাসী মানুষ ছুটে আসেন তার হাম্মখানা দেখতে এবং পোড়ামাটির গন্ধ নিতে। দৈনিক ডেসটিনির এ প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎকালে হাম্মামখানাটির সাইটএটেন্ড সহিদুল ইসলাম জানান,হাম্মামখানার অনুকুলে ১একর ৯৩ শতক জমি থাকলেও তা সরকারের সাথে এলাকাবাসীর বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মামলা চলমান রয়েছে। তবে এটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করতে পারলে প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
রিপোর্ট : আব্দুস সালাম,কেশবপুর (khulna tv)