কার্বনেটেড বেভারেজ শিল্প ধ্বংসের জন্য এনার্জি ড্রিংক বাজারে আনতে পাঁয়তারা!

বাংলাদেশ

মোঃ সাব্বির হোসেন:

কার্বোনেটেড বেভারেজ বাংলাদেশে একটি ভাবনাময় আর্থিক খাত। প্রথম কাতারের ১০টি আর্থিক খাতের মধ্যে কার্বোনেটের বেভারেজ এটা অন্যতম। এই খাতকে ধ্বংস ও এর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি মহল দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে চলেছে। বাইরের দেশের চক্রান্ত কারীরা এর সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ।

তারা অতিমাত্রার ক্যাফেইন যুক্ত এনার্জি ড্রিংক বাজারে আনার জন্য বিভিন্ন মহলে তদবির ও পাঁয়তারা করছে। অতিমাত্রার ক্যাফেইন যুক্ত এনার্জি ড্রিঙ্ক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৮ বছরের তরুণদের নিকট বিক্রয় করার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এই উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন যুক্ত এনার্জি ড্রিংক মাদক হিসেবে পরিগণিত হয়।

২০২৩ সালের ২০ শে ডিসেম্বর,জাকিয়া সুলতানা, সিনিয়র সচিব এর সভাপতিত্বে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বাংলাদেশ বেভারেজ মেনুফ্যাকচারারস এসোসিয়েশন,মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর,ইসলামিক ফাউন্ডেশন,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার ফলে এনার্জি ড্রিংক এর মান প্রণয়নের বিষয়ে কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিএসটিআই আবারো এনার্জি ড্রিংক এর মান প্রণয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিএসটিআই ইতিমধ্যে এনার্জি ড্রিংক এর একটি খসড়া মান তৈরি করেছে। যেখানে উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন এবং কিছু উদ্দীপক উপাদান রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে সকল স্টেক হোল্ডারদের উপস্থিতিতে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বক্তারা এনার্জি ড্রিংক এর স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করেন।

এনার্জি ড্রিংকে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন রয়েছে, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এছাড়াও এনার্জি ড্রিংকে টওরিন নামক যা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও শুকরের দ্বারা ও পাওয়া যায় তবে অনুসন্ধানে জানা যায় শুকরের দ্বারা যেটা পাওয়া যায় সেটা দামে কম এবং সস্তা কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামি টা বেশি ব্যবহার করে থাকেন যেটা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া ইনোসিটল, গ্লুকোনোল্যাক্টন জাতীয় উদ্দীপক উপাদান রয়েছে,যা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এনার্জি ড্রিংক বা উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন যুক্ত কার্বনেট বেভারেজ আমাদের দেশের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়, যেখানে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে সেই বিবেচনায় আরো ব্যাপক ভাবে চিন্তা ভাবনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ প্রয়োজন।

যেকোনো ভুল একটা সিদ্ধান্ত আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়াও আমাদের সম্ভাবনাময় কার্বোনেটেড বেভারেজ সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেখানে ৫ লক্ষ কর্মী কর্মরত রয়েছে। এই সেক্টরের উদ্যোক্তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। যেখানে কার্বোনেটেড বেভারেজ ছাড়াও অন্যান্য পণ্য যেমন পানি, চিপস্, জুস, দুধের মত অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদিত হয় যা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করে।কিন্তু এনার্জি ড্রিংক এর মান প্রণয়ন হলে কার্বনেটেড বেভারেজ শিল্প হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। মাদকের ব্যবহার বেড়ে যেতে পারে। অনেক অবৈধ ও অসাধু চক্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এনার্জি ড্রিঙ্ক নামে বিভিন্ন অবৈধ পণ্য বাজারে আনতে সচেষ্ট হবে এবং হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায় এ ধরনের যেকোনো পন্যের ক্ষেত্রে আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিত।

কারণ এ ধরনের পণ্য ধীরে ধীরে নেশার দিকে ধাবিত করে এবং একটা সময় নেশাগ্রস্ত হয়ে যায় ফলে মরণব্যাধি ক্যান্সার লিভার নষ্ট হওয়া হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া সহ আরো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এজন্য ইসলাম ধর্মে নেশাকে সম্পূর্ণভাবে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপরের বিষয়গুলো সঠিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় মহাসচিব দেওয়ান ওমর ফারুক বলেন,এই প্রজন্ম আমাদেরই সন্তান, আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ,এই প্রজন্মকে সুস্থ রাখা একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়া এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।এখনই সময় আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সকল ধ্বংসাত্মক চক্রান্তকে নশ্চাত করে দিতে হবে।তাই আসুন আমরা সকলে এক সাথে চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। সার্বিক বিষয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই এই ধরনের ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিঙ্ক নিষিদ্ধ সহ সচেতন করতে হবে এভাবে চলতে থাকলে নতুন প্রজন্মের কিডনি হার্ড প্রেসার ডায়াবেটিস পড়াশোনায় অমনোযোগী স্বাস্থ্যহীনতা নিদ্রা জনিত সমস্যায় সহ আরো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বে এবং এই প্রজন্ম ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাবে।সরকারি বেসরকারি সকল মহল থেকে এর প্রচার-প্রসার বাড়াতে হবে এবং এই এনার্জি ড্রিংক এর ছোবল থেকে নতুন প্রজন্মকেহ রক্ষা করতে হবে। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ সুন্দর একটি পৃথিবী উপহার দেয়া এটা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

Tagged

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.