দেশের শিল্প উৎপাদন নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে: শিল্প মন্ত্রী
শিল্পমন্ত্রী বলেন, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে বাংলাদেশের অবস্থান কিছু দিন আগেও সন্তোষজনক ছিল না। নারীরা অবহেলিত ছিল এবং নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পেত না। কোনো কোনো ব্যাংক ঋণ দিতে রাজি হলেও জামানত ছাড়া ঋণ মিলত না। সেই দিন বদলে গেছে। এখন আর সেই ‘কালচার’ নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিমালা পরিবর্তন হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী উদ্যোক্তাবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। ফলে এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।
দেশের শিল্প উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালা পরিবর্তন করে নারীদের জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে। তবে শুধু ঋণ দিলেই হবে না, ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য শিল্প উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘নারী উদ্যোক্তা : প্রতিবন্ধকতা উত্তরণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়নাধীন প্রিজম প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা সমিতি (ওয়েব) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে এ কথা বলেন ।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ব ২০৩১ সাল: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোর মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ, মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, পণ্য বৈচিত্রকরণ, বাজার লিংকেজ স্থাপন, প্রকল্প গ্রহণে সহায়তা প্রদান, ডিজাইন ও নকশা উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের নীতি সহায়তা দিচ্ছে।
টেকসই এসএমই খাতের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন কাজ করছে উল্লেখ করে আমু বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৭৭টি শিল্প ক্লাস্টার চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ক্লাস্টারে শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বল্প সুদে অর্থায়ন, নতুন উদ্যোক্তা তৈরির কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এসএমই ক্রেডিট হোলসেল কর্মসূচির আওতায় নির্দিষ্ট নারী উদ্যোক্তারা ৯ শতাংশ সুদে জামানতবিহীণ ঋণ পাচ্ছেন।
বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে যেসব শিল্পনগরী কিংবা শিল্পপার্ক স্থাপন করা হবে, সেগুলোতেও নারী উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ পাবেন। সরকারের গৃহীত এসব উদ্যোগের ফলে দেশে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ লাখ এসএমই উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। এসব এসএমই শিল্প জিডিপিতে শতকরা ২৩ ভাগ এবং মোট শিল্প কর্মসংস্থানে শতকরা ৮০ ভাগ অবদান রাখছে।
সমাজে নারীরা সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পীকার নারী, সংসদ উপনেতা নারী, বিরোধী দলীয় নেতাও একজন নারী। দেশের সামরিক বাহিনী, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ সমাজের সকল স্তরে নারীরা আজ সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের গৌরবময় তৈরি পোশাক শিল্পখাতে কর্মরত শতকরা ৮০ জনই নারী। নারীদের কর্মসংস্থানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপের প্রতিবেদন অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
বিসিক চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মোহাম্মদ ইফতেখারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন- শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এনামুল হক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি মেনফ্রেড ফেরিনহোলজ এবং ওয়েবের চেয়ারম্যান নাসরিন ফাতেমা আউয়াল। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ।
মূল প্রবন্ধে ড. নাজনিন ২০১৩ সালের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের মোট উদ্যোক্তা ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭২ লাখ ৫৫ হাজার ১৯৭ জন এবং নারী ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬৮ জন। অর্থাৎ মোট উদ্যোক্তার মাত্র ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নারী।