হারিক্যানের শক্তিতে ধেয়ে আসছে তিতলি ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত!
হারিক্যানের তীব্রতাসম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় তিতলি। এটি আরো শক্তিশালী হতে পারে। গতকাল রাতে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। তবে তা দমকা ও ঝড়োহাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, হারিক্যানের শক্তিসম্পন্ন তিতলি আরো উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে উড়িষ্যা ও অন্ধ্র উপকূল মধ্যবর্তী গোপালপুরের কাছ দিয়ে স্থলভাগে উঠে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থারত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তিতলির প্রভাবে বাংলাদেশে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। আজ সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। গতকাল তিতলির প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু বৃষ্টি হয়েছে। দিনের প্রায় পুরো সময় আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। ফলে তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে।
তিতলি নামটি দিয়েছে পাকিস্তান। এটা উর্দু ও হিন্দি ভাষায় সমানভাবে পরিচিত, যার অর্থ প্রজাপতি।
তিতলির শঙ্কায় ওড়িশা ও অন্ধ্র
শক্তি বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ওড়িশা ও অন্ধ্রের উপকূলে আছড়ে পড়ার কথা ঘূর্ণিঝড় তিতলির। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উপরে ঘোরাফেরা করা গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠকে বসেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। গঞ্জাম, পুরী, খুরদা, কেন্দ্রাপড়া ও জগৎসিংহপুর থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আজ ও কাল বন্ধ থাকবে গজপতি, গঞ্জাম, পুরী ও জগৎসিংহপুরের স্কুল-কলেজ।
ভারতের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ওড়িশার গোপালপুর এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তনমে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়বে তিতলি। দফতরের কর্তা এইচ আর বিশ্বাসের কথায়, ‘‘আগামী ১৮ ঘণ্টায় আরও শক্তি বাড়াবে ওই ঘূর্ণিঝড়। কাল ভোরে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে সরে গোপালপুর ও কলিঙ্গপত্তনমের উপর দিয়ে ওড়িশা ও অন্ধপ্রদেশ পেরোবে। এর পরে ফের একই জায়গায় ঘুরে এসে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে সরে যাবে। সেখানে পৌঁছে ধীরে ধীরে শক্তি কমবে ঝড়ের।
তিতলির জেরে গঞ্জাম, গজপতি, পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপড়া, খুরদা, নয়াগড়, কটক, জাজপুর, ভদ্রক ও বালেশ্বরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বুধবার রাত থেকে দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল বরাবর ঘণ্টায় ১৪০-১৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইবে। তা ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটারও হতে পারে। দক্ষিণ উপকূলে ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্র অশান্ত থাকায় শুক্রবার পর্যন্ত ওড়িশা উপকূল এবং মধ্য ও উত্তর বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকার মৎস্যজীবীদের সাবধান করা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টিতে বন্যার আশঙ্কায় ওড়িশার প্রতিটি জেলায় সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। মুখ্য সচিব এ পি পাধি জানিয়েছেন, দুর্যোগে এক জনেরও যাতে প্রাণহানি না হয়, তার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য। বিশেষ ত্রাণ কমিশনার বিপি শেট্টি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে বিপজ্জনক ও নিচু এলাকাগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য প্রস্তুত ৩০০টি মোটর বোট। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৬টি দল, ওড়িশার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের ১১টি দল ও দমকল বাহিনী তৈরি রাখা হয়েছে। বিশাখাপত্তমন থেকে নৌবাহিনীর বিশেষ ডুবুরি দল চিল্কায় গিয়েছে। চিকিৎসকদের একটি দলও প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেখানে।