মোঃ রহমতুল্লাহ: আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এনজিও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। প্রায়ই দেখা যায় নামসর্বস্ব এনজিও গুলো অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে। যখনই এই নামসর্বস্ব এনজিও গুলো হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে পলাতক হয় তখনই আমাদের প্রশাসনের নজরে আসে।
এনজিও ব্যুরো, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ তদারকি না থাকার কারণে এ ঘটনা গুলো ঘটছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি থেকে এনজিওগুলোকে যে হারে সঞ্চয় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তার থেকে অধিক সঞ্চয় নিলেও সে বিষয়ে এদের কোন নজরদারী নেই।
এনজিও গুলোর কোন মেয়াদি আমানত ও ডিপিএস করার বিধান না থাকলেও তারা অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের নিকট থেকে সঞ্চয় গ্রহণ ও আমানত করছে। এনজিওগুলোর সর্বোচ্চ আমানত গ্রহণের কথা ১০% থাকলেও কোথাও কোথাও তারা ১০০ শতাংশের অধিক আমানত সংগ্রহ করছে এবং চালু রেখেছে ডিপিএস।
ব্যাংকগুলো যেখানে গ্রাহকদেরকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ বাৎসরিক সুদ প্রদান করছে সেখানে এনজিওগুলো কোথাও কোথাও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মুনাফা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকের থেকে সঞ্চয় গ্রহণ করছে। এতে করে সমাজের সঞ্চিত অর্থ গুলো অননুমোদিত এনজিও গুলো চোরাকারবারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। বিভিন্নভাবে নামসর্বস্ব এনজিওগুলোর মাধ্যমে পাচার হচ্ছে দেশের অর্থ। সংকটে পড়ছে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার।
ইতিমধ্যে এহসান গ্রুপ,সেফ গ্রুপ, চলন্তিকা যুব সোসাইটি, বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট এ ধরনের নামসর্বস্ব এনজিওগুলো খুলনা বিভাগ হতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে আত্মসাৎ করেছে। এরা গ্রাহকদের কোন টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অজুহাতে গা-ঢাকা দিয়েছে। আবার নিজেরা মামলা করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করা না লাগে সে ধরনের বন্দোবস্ত করেছে।
ইতিমধ্যে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল মান্নান এর বিরুদ্ধে দুদক কর্তৃক মামলা হয়। মামলায় তিনি আটক হওয়ার পর জামিন নিয়ে বের হয়ে ভিন্ন কৌশলে শুরু করেছেন নতুন করে প্রতারণা। মহামান্য হাইকোর্ট জামিন বাতিল করলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি এখনও রয়ে গেছেন জেলহাজতের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে খুলনার সেফ গ্রুপের স্বত্বাধিকারী খুলনা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর ডাক্তার মোক্তার হুসাইন ও তার ছেলে সেফ গ্রূপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ মামুন ও ফয়সাল গং সেফ গ্রুপের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রয় করে ইতিমধ্যে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ না করে প্রায় সমস্ত অর্থ পাচার করে দিয়েছে সিঙ্গাপুরে।
তারা নতুন এনআইডি কার্ড পাসপোর্ট তৈরি করে সিঙ্গাপুর যাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছে। যেকোনো সময় তারা দেশত্যাগ করতে পারে।
এখন তাহলে প্রশ্ন এ সকল অপরাধের আর নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার পরে কি আমাদের প্রশাসনের নজরে আসবে। তাহলে নিরুপায় এই সাধারণ মানুষ কি তাদের অর্থ ফেরত পাবে না? আমাদের এনজিও ব্যুরো, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি ও বাংলাদেশ ব্যাংক কে এ ব্যাপারে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
তা নাহলে একের পর এক এ ধরনের নাম সর্বস্ব কোম্পানি গুলো সাধারণ মানুষদের ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে যায় বিদেশে, আর সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় মানুষগুলো পথে পথে ঘুরে বেড়ায় টাকা পাওয়ার আশায়, কিন্তু ততদিনে তাদেরই টাকা তাদের কাছে হয়ে যাই সোনার হরিণ।