খন্দকার সাইফুল নড়াইলঃ আর্ন্তজাতিক পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে নড়াইলের চিত্রা নদীতে অনুষ্ঠিত হলো এস এম সুলতান নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই বাইচ দেখতে আশেপাশের জেলা সহ স্থানীয়দের পদভারে মুখরিত চিত্রা নদীর দুপাড় জনস্রোতে পরিণত হয়েছিল ।
শনিবার (২ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে নড়াইলের পুরাতন ফেরীঘাটে নৌকাবাইচের উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো.মাহাবুব আলী। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-০২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজা, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব মো: মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: ইসমাইল হোসেন, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এড.সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারন সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু, নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমানারা বেগম, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সদস্য সচীব আশিকুর রহমান মিকু প্রমুখ।
নৌকাবাইচে যশোর, খুলনা, মাগুরা, পাবনা, গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের মোট ১৬টি নৌকা অংশগ্রহন করে। নড়াইল পুরাতন ফেরীঘাটের রাসেল সেতু হতে শুরু হয়ে মাছিমদিয়ার এস এম সুলতান সেতু পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বাইচে অংশ নেয় এরা। কালাই নৌকা ১০ টি, টালাই ৫টি এবং নারীদের একটি নৌকা অংশগ্রহন করে। মোট ৫টি টানে বাইচ শেষ হয়। মাগুরার আকরামের আল্লার দান নৌকাটি কালাই গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। একই গ্রুপে ২য় স্থান অধিকার করেছে পাবনার হাফিজুর রহমানের শাপলা, এবং ৩য় স্থান অধিকার করেছে মাগুরার আতর আলীর মায়ের দোয়া।
টালাই গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করেছে খুলনার আলকাচ শেখের সোনার বাংলা নৌকা। একই গ্রুপে ২য় স্থান অধিকার করেছে খুলনার বাইজল শিকদারের রকেট, এবং ৩য় স্থান অধিকার করেছে গোপালগঞ্জের নিকুণ্জ কুমারের মা শীতলা। প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় পুরস্কার ফ্রিজ, তৃতীয় পুরস্কার টেলিভিশন। এছাড়া অংশগ্রহকারীদের জন্য ছিল সৌজন্য পুরস্কার। বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহাবুব আলী।
এদিকে নৌকাবাইচকে ঘিরে জমিদারবাড়ির বাধাঘাট, চরের ঘাট আর পঙ্কবিলা ঘাটে মেলা বসে। মেলায় নানা ধরনের নাগরদোলা, চরকি আর পসরা নিয়ে বসেছিলো আগত দর্শকদের জন্য। নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃদ্ধের আগমনে এ নৌকা বাইচ যেন পরিণত হয় মিলন মেলায়। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচ দেখতে চিত্রা নদীর দুই পাড়ে, বাড়ির ছাদে, গাছের ডালে বসে যে যেখান থেকে যে ভাবে পেরেছে সেভাবেই সবাই উপভোগ করেছে।
এ আনন্দ উপভোগ করতে সবাই সারা বছর যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিল। উল্লেখ্য শিল্পী সুলতান তার চিত্রকর্মে গ্রামীন জীবন, জনপদ ও সংস্কৃতিকে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রতিবছর তারই জন্মবার্ষিকীতে নৌকাবাইচ আয়োজনের মাধ্যমে শিল্পীর সেইস্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা সুলতান প্রেমী নড়াইলবাসীর। এ বছর করোনার কারনে তা পিছিয়ে পর্যটন দিবস উদযাপন করতেই আয়োজনটি করা হয়।
আয়োজকরা জানান, সুলতান সবসময় গ্রামীণ বাংলার সাংস্কৃতিকে লালন পালন করতেন। আর তার সেই আজিবনের লালিত স্বপ্নকে ধরে রাখতেই প্রতিবছর নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
খুলনা টিভি/khulna tv