৭ মার্চ শুধুমাত্র একটি মুক্তিবার্তা নয় একটি স্বাধীনতার ইতিহাস !
যাঁরা একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতির নির্মাতা, তাঁদের জীবন ও কর্ম থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে বহু কিছু। সেই শিক্ষা যারা নিতে চায় না, সেই জাতি হতভাগ্য। তাদের অতীত আছে, কিন্তু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নেই। বাংলাদেশের মানুষের আর কিছু না থাক, তাদের একটি গৌরবের অতীত রয়েছে। ৭ মার্চের সেই অবিস্মরণীয় জনসভায় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসক ও বাংলার জনগণকে যে বার্তা দেন তা হলো, ‘আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
৭ মার্চ থেকে বাঙালির মধ্যে একটি ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য সৃষ্টি হয়। দেশ চলছিল শেখ মুজিবের নির্দেশে। সব শ্রেণি ও পেশার মধ্যে সৃষ্টি হয় সংহতির। আনসার, পুলিশ, ইপিআর এবং সেনাবাহিনীর বাঙালি সৈন্য ও অফিসারদের মধ্যে স্বাধিকারবোধের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি যাঁরা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেন, তাঁরা একটু খেয়াল করে শুনলে বা পাঠ করলে লক্ষ করবেন ওই ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য একটি বাক্যও ছিল না। সেখানে পুরোটাই বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মুক্তির কথা।
শতাব্দীর পর শতাব্দী অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিত বাংলার মানুষ চেয়েছে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার। তারা চেয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার। বহু পদানত জাতি খেয়ে-পরে বেশ ভালো থাকে। সে ভালো ভালো নয়। অধিকারহীন অবস্থায় সুগন্ধি বাসমতী চালের ভাত খাওয়ার চেয়ে মুক্ত ও স্বাধীন মানুষ হিসেবে মোটা ইরি চালের ভাতই হাজার গুণ ভালো। স্কুল, কলেজ, ব্রিজ, কালভার্ট, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ইত্যাদির জন্য কোনো জাতি স্বাধীনতা চায় না। পরাধীন ব্রিটিশ আমলে সেগুলো যথেষ্ট হয়েছে। পাকিস্তানি আমলেও হয়েছে। ৭ মার্চের বার্তা হলো অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। এবং ৭ মার্চের শিক্ষা হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ ন্যায়সংগত।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বা ‘বিশ্বের স্মৃতি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। গত ৩০ অক্টোবর ২০১৭, রোজ সোমবার প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দফতরে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এক বিজ্ঞপ্তিতে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্বালাময়ী ওই ভাষণটিকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে ঘোষণা করেন।
সূত্র : খুলনা টিভি (সাব্বির )