একমাত্র আল্লাহ সর্বময় সর্বশক্তিমান ও প্রশংসা যোগ্য !

একমাত্র আল্লাহ সর্বময় সর্বশক্তিমান ও প্রশংসা যোগ্য !

ধর্ম ও জীবন

একমাত্র আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও প্রশংসা যোগ্য !

সত্তা, গুণাবলি, কর্ম ও অধিকারে আল্লাহ তায়ালার একত্ব ও অনন্যতার বর্ণনা করার সথে সাথে কুরআন মাজিদ এ কথাও বলে যে, তিনি অধিকারের ক্ষেত্রেও একক, শরিক বিহীন। বান্দাদের ওপর তার যেসব অধিকার রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কারো তা নেই। প্রশংসা ও সাধুবাদ তারই অধিকার। তিনিই প্রীতি ও ভীতির যোগ্য।

এমন উপযুক্ত তিনিই যার ওপর নির্ভর করা যায়, যার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা যায়। তিনিই প্রকৃত মালিক ও শাসক, যার শাসন মানা যায়। অর্থাৎ, বান্দাদের জন্য শরিয়ত তথা বিধান নির্ধারণ করা তারই অধিকার। তিনিই প্রার্থনা শ্রবণকারী ও গ্রহণকারী। তাই তার কাছেই প্রার্থনা জানাতে হবে এবং তিনিই ইলাহ এবং মা’বুদ। অতএব, তার এবং শুধুমাত্র তারই ইবাদত করা যাবে। তার সাথে কাউকে শরিক করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে কুরআনের বর্ণনা শুনুন, ‘আর তিনিই আল্লাহ। তাকে ছাড়া কেউ ইবাদত ও উপাসনার যোগ্য নেই। দুনিয়া ও আখেরাতের শুধুমাত্র তিনিই প্রশংসা ও সাধুবাদের যোগ্য।’ (সূরা কাসাস : আয়াত ৭০)। অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘সমস্ত প্রশংসা ও সাধুবাদ আল্লাহরই জন্য যিনি আসমান, জমিন ও সমগ্র জগৎ-সংসারের পালনকর্তা। আর শুধুমাত্র তারই জন্য মহিমা ও মহত্ব আসমান ও জমিনে। আর তিনিই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা জাসিয়াহ : আয়াত ৩৬-৩৭)।
নিজের সীমাহীন আশীর্বাদ, ইহসান ও পূর্ণাঙ্গতার দিক দিয়ে তিনিই এর যোগ্য যে, বান্দা সর্বাপেক্ষা অধিক মহব্বত পোষণ করবে তার প্রতি এবং তাকেই সবার চাইতে বেশি আপন জানবে। আর তার প্রজ্ঞাময় বিক্রম ও পরাক্রমের দিক দিয়ে তিনিই এমন যোগ্য যে, তার বান্দারা সর্বাধিক তাকেই ভয় করবে।

তিনি ঘোষণা করেন, ‘বলুন, হে আল্লাহ! আপনিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। আপনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। আপনার হাতেই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আপনি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের ভেতরে।

আর আপনিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আনেন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের করেন। আর আপনিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন। মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশংকা করলে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সম্পর্কে সতর্ক করেছেন তোমাদেরকে এবং সবাইকে।

তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। বলুন! তোমরা যদি মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সেসবও তিনি জানেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (আলে ইমরান ৩/২৬-২৯)।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘যা কিছু আসমান সমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে, সব আল্লাহর। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নিবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দিবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (বাক্বারাহ ২/২৮৪)।

যেসব অজ্ঞ ও মূর্খ লোকেরা আল্লাহকে ছাড়া কিছু সত্তাকে এমন সাব্যস্ত করে রেখেছে, যাদের সাথে তারা উপাসনা ও বিনয়ের সম্পর্ক রাখে, তাদেরকে আল্লাহর সমান মহব্বত করে, এদের ব্যাপারে কুরআন বলেছে, ‘কিছু লোক এমন রয়েছে; যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্যান্যদেরকে তার সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত করে। তারা তাদের সাথে এমনি মহব্বত রাখে, যেমন মহব্বত আল্লাহর সাথে রাখা উচিত।

পক্ষান্তরে যারা ঈমানদার তারা সর্বাধিক মহব্বত করে আল্লাহকে।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৬৫)। আর ভীতি সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা মানুষকে ভয় করবে এবং তার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।’ (সূরা তাওবা : আয়াত ১৩)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মানুষকে ভয় করো না; বরং আমাকে এবং শুধুমাত্র আমাকেই ভয় করো।’ (সূরা মায়েদা : আয়াত ৪৪)।
তেমনিভাবে আল্লাহ তায়লার উপরই নির্ভর করা যায় এবং তার কাছেই আশা করা যায়। এ ব্যাপারে কুরআন ঘোষণা করেছে, ‘তিনিই আল্লাহ, আমদের কর্মনির্বাহী ও মালিক। সুতরাং সেই আল্লাহর প্রতি ঈমানদারদের ভরসা করা উচিত।’ (সূরা তাওবা : আয়াত ৫১)।

সূরা হজ্জে বলা হয়েছে, ‘শুধুমাত্র আল্লাহরই আশ্রয় অবলম্বন করো দৃঢ়ভাবে। তিনিই তোমাদের কর্মনির্বাহী। আর আল্লাহ যার কর্মনির্বাহী হন, তার জন্য তিনি কতই না উত্তম কর্মনির্বাহী এবং উত্তম সাহায্যকারী।’ (সূরা হজ্জ : আয়াত ৭৮)।
সূরা মুজ্জাম্মিলে বলা হয়েছে- ‘তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের মালিক। তিনিই সত্যিকার মা’বুদ। তাকে ছাড়া সেউ ইবাদত-উপাসনার যোগ্য নেই। কাজেই তোমরা তাকেই নিজেদের কর্মনির্বাহী সাব্যস্ত করে নাও। আর প্রয়োজনে তারই কাছে প্রত্যাবর্তন করো। (তারই সাহায্য প্রার্থনা করো।)’ (সূরা মুজ্জাম্মিল : আয়াত ৯)।

কুরআনে পাকের জায়গায় জায়গায় বলা হয়েছে, আল্লাহই একমাত্র হুকুমদাতা এবং তার হুকুম তামিল করাই অপরিহার্য। বলা হয়েছে, ‘আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোনো সিদ্ধান্তদাতা বিচারকের সন্ধান করব, অথচ তিনি তোমাদের প্রতি বিস্তারিত কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।’ (সূরা আনআম : আয়াত ১১৪)।

যেসব মূর্খ আল্লাহকে ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তির বলা কথাকে শরিয়ত সাব্যস্ত করে এবং তাদের অনুগত্যকে অপরিহার্য মনে করে, তাদের সম্পর্কে কুরআন বলেছে, ‘তাদের কি আর কোনো অংশীদার রয়েছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন ও বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শূরা : আয়াত ২১)।

পৃথিবীর রাজা-বাদশাহ, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীগণ তাদের রাজ্য পরিচালনা করতে বেশ কিছু সংখ্যক মন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আমাদের বাংলাদেশের মত একটা ছোট দেশেও ৩০/৩৫ জন মন্ত্রীর দরকার হয়। তাছাড়া বড় বড় কর্মকর্তাদের সংখ্যা তো আরো অনেক।
এভাবে সমগ্র বিশ্ব প্রায় লক্ষ লক্ষ মন্ত্রী এবং কোটি কোটি বড় বড় কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত নয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অসীম ও অনন্ত রাজত্বের অগণনীয় মানুষের অসংখ্য ধর্মের, বিভিন্ন মতাবলম্বীর, অগণনীয় ভাল-মন্দ কাজের, সত্যের সুফল, মন্দের শাস্তি, ন্যায়ের পুরস্কার, অন্যায়ের তিরস্কার, সুবিচারের প্রতিদান, অবিচারের প্রতিফল, বিশ্বাসের মহাপুরস্কার, অবিশ্বাসের কঠোর শাস্তি, বিবেকবানদের জন্য ক্ষমা ও সহানুভূতি, বিবেকহীনদের জন্য বিমুখতা ও নিষ্ঠুরতা, পুণ্যবানদের জন্য জান্নাত এবং পাপীদের জন্য জাহান্নাম লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। ক্বিয়ামতের দিন তিনি একাকী সমস্ত মানুষের হিসাব নিবেন এবং বিচার করবেন, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এজন্যেই পবিত্র কুরআনে বার বার ঘোষিত হয়েছে, ‘আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান’।

রিপোর্ট: সাব্বির হোসেন (খুলনা টিভি)

Tagged

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.