কুরআনের অলৌকিকতা, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের স্বীকৃতি মহাগ্রন্থ কুরআন!_khulnatv

কুরআনের অলৌকিকতা, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের স্বীকৃতি মহাগ্রন্থ কুরআন! পর্ব-০১

ধর্ম ও জীবন

বর্তমান যুগেও যেসব উদারমনা বিজ্ঞানী কোরআন নিয়ে গবেষণা করেছেন তারা সবাই এটা স্বীকার করেছেন যে,বিজ্ঞান সম্পর্কে কোরআনে যেসব কথা বলা হয়েছেতা আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কানাডার সাবেক খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক ও অধ্যাপক ড.গ্যারি মিলার পবিত্র কোরআন সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। কোরআন নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যটা মোটেই ভালো ছিল না।

খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক হওয়ার কারণে তিনি ইসলাম ধর্মের নানা ভুল-ত্রুটি খুঁজে বেড়াতেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, কোরআন ঘেটে এমন কিছু বিষয় বের করবেন যা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যাবে এবং কোরআনকে ঐশী ধর্ম হিসেবে প্রত্যাখ্যান করা যাবে। তিনি কোরআনে ভুল খোঁজার জন্য কাজ শুরু করলেন। কিন্তু তিনি কোরআন নিয়ে যতবেশি গবেষণা করলেন ততই বিস্মিত হতে থাকলেন। এভাবে কোরআন যে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ সে বিষয়টি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠলো। অবশেষে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল বলে যে তত্ত্ব বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ৩০ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে,

 “সত্য-প্রত্যাখ্যানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এক সাথে মিশে ছিল। অতঃপর আমি উভয়কে আলাদা করলাম এবং সব প্রাণীকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।” ড.মিলার বলেছেন, এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন যে ঐশী গ্রস্থ তা মেনে নিতে বাধ্য হই। যারা প্রচার চালায় যে কোরআন হচ্ছে হযরত মোহাম্মদ (সা.)’র নিজস্ব বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।

ড. মিলার বলেছেন, ১৪শ বছর আগে ইসলামের নবীর পক্ষে কীভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে কথা বলা সম্ভব, যিনি কোন দিন কোন স্কুলে পড়ালেখা করেননি। কারণ এটি এমন এক বৈজ্ঞানিক বিষয় যা সম্পর্কে তত্ত্ব আবিস্কার করে মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এক বিজ্ঞানী। মিলারের মতে,এই আয়াতে সেই বিগ ব্যাং’র কথাই বলা হয়েছে যার মাধ্যমে পৃথিবী, আকাশমন্ডলী ও তারকারাজি সৃষ্টি হয়েছে। এই আয়াতের শেষাংশে পানিকে জীবনের উৎস বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়টিও আধুনিক বিজ্ঞানীদের প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রত্যেক প্রাণি দেহের মৌলিক গাঠনিক একক হচ্ছে কোষ এবং এই কোষের মূল উপাদান হচ্ছে সাইটোপ্লাজম। পানি ছাড়া কেউই তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে না।

একারণে মহাকাশবিজ্ঞানীরা যখন পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহ বা উপগ্রহে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব অনুসন্ধান করেন, তখন তারা সর্বপ্রথমে খোঁজ করেন সেই গ্রহ বা উপগ্রহে কোনো পানির সন্ধান পাওয়া যায় কি-না। এর আগের অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা ফরাসি দার্শনিক ও চিকিৎসক মরিস বুকাইলি সম্পর্কে কথা বলেছি। তিনি তার “বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান” বইয়ে লিখেছেন, কোরআনের বিভিন্ন সূরায় সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে যেসব বক্তব্য এসেছে তার সবগুলোই আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি আরো লিখেছেন, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনের ঘটনা সম্পর্কে কোরআনের দু’টি আয়াতে সংক্ষেপে বর্ণনা এসেছে। এর একটি হলো সূরা আম্বিয়ার ৩০ নম্বর আয়াত। যেখানে মহাবিস্ফোরণের কথা বলা হয়েছে। অন্যটি হলো সূরা ফুস্সিলাতের ১১ নম্বর আয়াত যেখানে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অস্তিত্বের কথা বলে। ওই আয়াতে এসেছে,

“অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধোঁয়ার পুঞ্জবিশেষ, এরপর আকাশ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি হতে নির্দেশ দেন। এখানে ধূম্রপুঞ্জ শব্দটি বিশ্বের আদিম অবস্থার সঠিক বর্ণনা দিচ্ছে, যা ছিল গরম গ্যাসের পিণ্ড যাতে বস্তুকণা দ্রুত ছোটাছুটি করছে, ধোঁয়ার মত। এ থেকে গ্রহ, নক্ষত্র ও পৃথিবী তৈরি হয়।” মরিস বুকাইলি বলেছেন, বিশাল জায়গাজুড়ে যে ছায়াপথ রয়েছে তা প্রথমে কী ছিলো, সে ব্যাপারে আধুনিক বিজ্ঞান এখনও উত্তর দিতে পারেনি। আধুনিক বিজ্ঞান যা বলতে পারছে তাহলো বিশ্ব গ্যাসের পিণ্ড থেকে সৃষ্টি হয়েছে যা ঘূর্ণায়মান ছিল এবং এর মূল উপাদান হচ্ছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। তারপর নীহারিকা দৃশ্যমান বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডিত হয়েছে। আমরা মহাবিশ্ব সৃষ্টির বিষয়ে কথা বলছিলাম।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিস্ফোরণ বা বিং ব্যাং’র মাধ্যমেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, ওই বিস্ফোরণের পর অতি দ্রুততার সঙ্গে যেসব পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছিল তা থেকেই ছায়াপথ, সুর্য্য, তারা, পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলী সুশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, ওই বিস্ফোরণের পর ভারসাম্য ও শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে যাতে তিল পরিমাণ বিঘ্ন সৃষ্টি হলে সব কিছু উলটপালট হয়ে যাবে। মহাবিশ্বে এই যে সুনিপুন শৃঙ্খলা, এর অর্থই হলো এর সৃষ্টিকর্তা রয়েছে এবং সুপরিকল্পিত ভাবে তা সৃষ্টি করেছেন।

In the promotion: Md Sabbir Hossain

Tagged

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.