নিরপরাধ নিরীহ জনগণকে কোনো ধরনের হয়রানি না করতে পুলিশ কে নির্দেশ দিয়েছেন: প্রধানমন্ত্রী
দেশের নিরীহ জনগণকে কোনো ধরনের হয়রানি না করতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯’- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মনে রাখতে হবে দেশের নিরীহ জনগণকে কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না। বরং তারা হয়রানির শিকার হলে, বিপদে পড়লে তাদের সহযোগিতা করুন।’
সাধারণ জনগণকে যে কোনো ধরনের হয়রানি থেকে রক্ষা করা পুলিশের দায়িত্ব উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ এটাই আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের আস্থা অর্জনে ও জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী হতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে সততা ও আন্তরিকতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনাদের থেকে এটাই আমরা চাই।
দেশের সাধরণ মানুষের ভাগোন্নয়নে ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় থাকা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশটা আমাদের, এখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া, নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পুলিশকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে পথচারীদেরও অসচেতনতা রয়েছে।
দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মুলের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসীই। তাদের কোনো ধর্ম নেই, জাত নেই ও দেশ নেই। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ আমরা শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ চাই। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শান্তি, নিরাপত্তার ও শৃঙ্খলার প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশ। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে হতে হবে জনবান্ধব। পুলিশের ওপর জনগণ যেন আস্থা রাখতে পারে সেভাবে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’
এসময় গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ‘পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক-জঙ্গি নির্মূল করি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সারাদেশে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে তিনি পুলিশের বিভিন্ন বাহিনীর সজ্জিত প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। আর সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যের অংশগ্রহণে প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা। এসময় মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা পুলিশ সপ্তাহের এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠাতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মাদ জাবেদ পাটোয়ারী প্যারেডস্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।
পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ‘অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ’ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী এ বছর পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৩৪৯ জন সদস্যের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। গত ২৯ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে এবার ৪০ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ৬২ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১০৪ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ১৪৩ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ দেয়া হবে।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম, পুলিশ সদরদপ্তেরের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, র্যাবের অতিরিক্ত ডিজি আনোয়ার লতিফ খান, কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মীর শহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি মাঈনুর রহমান চৌধুরী, ইকবাল বাহার, ডিআইজি হাবিবুর রহমান, সিটিটিসি’র ডেপুটি কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ার্দারও পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকালে জীবন দেয়ায় ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন ও কনস্টেবল শামিম মিয়াও বিপিএম- মরোণত্তর পদক দেয়া হয়।