বাংলাদেশের জেলখানায় দুই তৃতীয়াংশ বন্দী বিনাবিচারে আটক রয়েছেন : সুলতানা কামাল
তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরর সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জেলখানাগুলোতে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ বিনাবিচারে আটক রয়েছেন। জেলখানাগুলোর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিন-চারগুন বেশী মানুষ জেলখানায় আটক রয়েছে। তার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ বিনাবিচারে আটক।
এরমধ্যে অনেক দোষী, অপরাধী কিংবা দুধর্রষ অপরাধী থাকলেও তাদের কোন বিচার হয়নি। তবে বন্দীদের মধ্যে একটি বড় অংশই কোন ধরণের অপরাধ না করেই জেলখানায় বন্দী হয়ে আছেন। বিনাবিচারে আটক করা যাবে না, গ্রেফতার করা যাবে না মানবাধিকারের সেসব কথাগুলো আমরা বে-মালুম ভুলে গিয়েছি এবং লঙ্ঘন করছি।
রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মানবাধিকার সংবিধান এবং বাংলাদেশ বিষয়ক’ সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড আমরা প্রত্যক্ষ করছি। মানুষের মৃতদেহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। কে বা কারা করছে সেটি আদালতের বিচার্য বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বিচার হয় না। এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে, মানুষ এখন আর ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে না।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবিক পরিস্থিতিতে এখনো মানুষকে নানা কারণে নানা বৈষম্যের স্বীকার হতে হচ্ছে। সংখ্যালঘুরা, আদিবাসী বাঙালিরা, নারী-পুরুষ,দলিত গোষ্ঠীর লোকেরা এখনও বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। কোনো সভ্য সমাজে এমন বৈষম্য থাকতে থাকতে পারে না। এটি অসংবিধানিক। এটি দূর করা প্রয়োজন।
মানবাধিকার প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, নাগরিকদের জীবন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে নিরাপত্তা অধিকার নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। মানবাধিকারের সূত্র অনুযায়ী, নিজেকেও বাঁচতে হবে এবং অন্যকেও বাঁচতে দিতে হবে। মানবাধিকারের ক্ষেত্রে এর থেকে আর বড় কিছু হতে পারে না। দেশের আইনের বিধানের বাইরে কোন নাগরিককে গ্রেফতার করা, নির্যাতন করা, দেশ থেকে বিতাড়িত করা, বেআইনী ঘোষণা করা এবং বিচার বহির্ভূত সকল হত্যাকান্ড মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, সংবিধান মতে দেশের সকল মানুষের নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. মনীন্দ্র কুমরা রায়ের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়্যারম্যান রাজীব প্রসাদ সাহা এবং আইন ও মানবাধিকার বিভাগের প্রধান কাজী লতিফুর রেজা। সেমিনারে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য শ্রীমতি সাহা, পরিচালক সম্পা সাহা, মহাবীর পতি এবং উপদেস্টা আবু আলম মো: শহীদ খানসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
মানবাধিকার প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল আরো বলেন, আমরা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করছি। মানুষের মৃতদেহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। কে বা কারা করছে সেটি আদালতের বিচার্য বিষয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বিচার হয়না। এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে মানুষ এখন আর ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেনা।দুর্নীতি দমনের ব্যাপারেও আমরা খারাপ অবস্থানে রয়েছি। দুর্নীতি দমনে আমরা কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি।
রিপোর্ট : সাব্বির হোসেন (খুলনা টিভি)